করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এবং রোগীর চিকিৎসায় গবেষণার তথ্য কাজে লাগাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণার তথ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করতে পারেনি। দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ও মহামারি নিয়ে গবেষণায় পিছিয়ে আছে।
বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সে তুলনায় এগিয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্বের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের বেশ কিছু গবেষণা ইতিমধ্যে বিদেশি চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এসব গবেষণার ফলাফল সরকারের কাছে পৌঁছায় কি না, পৌঁছালেও নীতিনির্ধারকদের কাছে তা কতটা গুরুত্ব পায়, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে।
করোনা মহামারি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব শুধু স্বাস্থ্য, চিকিৎসা বা হাসপাতালের ওপর পড়েনি; প্রভাব পড়েছে সমাজ ও ব্যক্তির ওপর, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতির ওপর, এমনকি বিদেশনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষ করোনা পরিস্থিতির শিকার। নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব ভিন্ন ধরনের। করোনা নিরাময়ে সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। টিকা উদ্ভাবনের কাজ চলছে।
মহামারি ও করোনাভাইরাস–সংশ্লিষ্ট এসব বিষয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। বলা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরপরই গবেষকেরা কাজে নেমে পড়েন। নতুন তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ জানার জন্য সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিকদের উন্মুখ হতে দেখা গেছে। এসব তথ্য মহামারি নিয়ন্ত্রণ, রোগীর চিকিৎসা ও জনদুর্ভোগ কমাতে কাজে লাগিয়েছে বিভিন্ন দেশ। করোনা–পরবর্তী জীবন কেমন হতে পারে, তা নিয়েও বড় বড় প্রতিষ্ঠান গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষেরও করোনা বিষয়ে নতুন তথ্য জানার ব্যাপক আগ্রহ আছে।
অনেকে মনে করেন, করোনা বিষয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে পরিমাণ গবেষণা, জরিপ বা সমীক্ষা হয়েছে ও হচ্ছে, তার তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ার আহমেদ মোশতাক রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কেন মানছে না, তা জানা সম্ভব গবেষণা থেকে। কত মানুষ সংক্রমিত, তা–ও জানা সম্ভব। কিন্তু এসব বিষয়ে গবেষণার তথ্য জানাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
এখনো গবেষণাই করছে
দেশে রোগের ওপর নজরদারি ও রোগ নিয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি করোনা নিয়ে দিনের পর দিন প্রেস ব্রিফিং করেছে, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বেশ আগে থেকে একাধিক গবেষণা শুরু করেছে। তবে কোনো গবেষণা এখনো শেষ করতে পারেনি।
দেশে করোনার সংক্রমণের সপ্তম মাস চলছে। আইইডিসিআর থেকে সংগ্রহ করা করোনাবিষয়ক গবেষণার তালিকায় দেখা যায়, ৮টি গবেষণা চলমান আছে। এর বাইরে তিনটি গবেষণা প্রকল্প তারা জমা দিয়েছে, এখন অর্থায়নের জন্য অপেক্ষা করছে। এ ছাড়া দুটি গবেষণা প্রকল্প পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। কাজ শুরু না হলেও একটি প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে।
চলমান গবেষণাগুলোর একটি স্বাস্থ্যকর্মীদের (চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সহকারী) করোনার ঝুঁকির কারণ নির্ণয় করা। অন্য একটি গবেষণা চলছে শুধু চিকিৎসকদের ঝুঁকির কারণ নির্ণয় করা। এই গবেষণা ফলাফল কবে প্রকাশ করা হবে এবং সেই ফলাফল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দিতে কী কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, ইতিমধ্যে করোনায় ৮৮ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
আইইডিসিআর দেশে করোনা সংক্রমণের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সঙ্গে যুক্ত থেকে ঢাকা শহরে জরিপ করেছে। এতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি। প্রায় এক মাস আগে তথ্যের প্রাথমিক বিশ্লেষণ চূড়ান্ত করা হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।
এসব বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তিনটি গবেষণা ফলাফল চূড়ান্ত করেছি। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’
রোগ নিয়ে গবেষণা করে সরকারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক বায়জিদ খুরশিদ রিয়াজ জানিয়েছেন, করোনা বিষয়ে তিনটি গবেষণা চলছে। এর একটি চূড়ান্ত হয়েছে। ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ফলাফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড ইনফেকশন–এ প্রকাশ করার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) জনসংখ্যা, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, হাসপাতালে সেবা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ জরিপ করে আসছে কয়েক দশক ধরে। এই প্রতিষ্ঠানও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো জরিপ বা গবেষণা করেনি। প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে একটি জাতীয় জরিপ করার পরিকল্পনা তাঁদের আছে।
সরকারের এই তিনটি প্রতিষ্ঠান করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করতে পারেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর দুটি জরিপ করেছে। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০৯টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করেছে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা করোনা শনাক্ত করতে সিটি স্ক্যান ব্যবহারের নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। সেই ফলাফল ভারতভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী স্কলার্স জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড মেডিকেল সায়েন্স–এ ছাপা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ করোনা নিয়ে গবেষণার জন্য ১৫টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি তালিকা পাওয়া গেলেও এসব গবেষণা কবে নাগাদ শুরু ও শেষ হবে, তা স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা এপ্রিল থেকে করোনার সংক্রমণ নিয়ে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেই তথ্য ব্যবহার করেছে। ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, তাঁদের তিনটি গবেষণা চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগও করোনা বিষয়ে মানুষের ধারণা নিয়ে একটি জরিপ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে গবেষণার বিষয়গুলো দেখাশোনা করে, গবেষণায় অনুদান দেয় তারা। কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে এ পর্যন্ত করোনা নিয়ে গবেষণার জন্য কোনো অনুদান দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার বিষয়ে গবেষণার জন্য ১০টি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের পরিচালক এ কে ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কোভিডের সামাজিক প্রভাব নিয়ে কিছু স্টাডি হচ্ছে, কিন্তু কোভিড নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক স্টাডি হচ্ছে না। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা নিজেদের আগ্রহের জায়গা থেকে সামাজিক জরিপ ধরনের কাজ করছেন। তিনি বলেন, কোনো গবেষকের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সাতটি গবেষণা প্রবন্ধ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে।
দেশে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৬টি। এগুলোর মধ্যে কারা মহামারি বিষয়ে রোগতাত্ত্বিক, বৈজ্ঞানিক বা সামাজিক গবেষণা করেছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার জন্য আলাদা বরাদ্দ দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কমপক্ষে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় করোনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছে, করছে।
কোভিডের সামাজিক প্রভাব নিয়ে কিছু স্টাডি হচ্ছে, কিন্তু কোভিড নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক স্টাডি হচ্ছে না। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা নিজেদের আগ্রহের জায়গা থেকে সামাজিক জরিপ ধরনের কাজ করছেন। তিনি বলেন, কোনো গবেষকের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।
এগিয়ে বেসরকারি খাত
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি মানতে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি, চলে ৩০ মে পর্যন্ত। এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে জরিপ ফলাফল প্রকাশ করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার। তারা বলেছে, করোনার কারণে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও নতুন দারিদ্র্যের এই তথ্য নীতিনির্ধারণী মহলে সাড়া ফেলে।
মহামারির শুরুর দিকে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর (পিপিই) মান নিয়ে চিকিৎসকসহ সম্মুখসারির স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে অভিযোগ ছিল। নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ পিপিই বিষয়ে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের মতামত নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এ পর্যন্ত আটটি জরিপ কাজ শেষ করেছে এবং ফলাফল প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃপক্ষ করোনাবিষয়ক যে গবেষণার তালিকা দিয়েছে তাতে দেখা যায়, তারা এ পর্যন্ত ১৪টি গবেষণা শেষ করেছে। এ ছাড়া ২৯টি গবেষণা চলমান। প্রতিষ্ঠানের অ্যাসোসিয়েট ডিন মালবিকা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামারিকে শুরু থেকেই আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের সবারই এ ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ ছিল।’ এসব জরিপ ও গবেষণার ফলাফল ৩০টির বেশি অনলাইন সেমিনারে প্রকাশ করা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানের ২২০ জন কর্মকর্তা বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির অর্থ ও বোনাস নেননি। সেই টাকা গবেষণার কাজে লাগানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশকে (আইসিডিডিআরবি) স্বাস্থ্য বিষয়ে দেশের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত করোনা বিষয়ে ৩৭টি গবেষণা প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সঙ্গে তারা একাধিক প্রকল্পে কাজ করছে। এমন তিনটি গবেষণা শেষ হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনোটির ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে দুটি গবেষণা শেষ করেছে। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা নিয়ে গবেষণা করছে।
ছোটদের বড় কাজ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন ২০১৮ সালে গড়ে তোলেন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অর্গানাইজেশন। এই সংগঠন থেকে করোনা বিষয়ে ১৫টি গবেষণা প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা ও সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম বর্জ্য নিয়ে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুনের একটি একটি প্রতিবেদন ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের দুজন গবেষক। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অর্গানাইজেশন একাধিক গবেষণা করেছে।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে সরকারের আগ্রহ আছে কি না, জানি না। সরকারের বা নীতিনির্ধারকদের কাছে কীভাবে পৌঁছাতে হয়, তা জানি না বা চেষ্টাও করিনি।’
মহামারি নিয়ন্ত্রণে গবেষণার তথ্য জরুরি। তবে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য গবেষণার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায়নি। অন্যদিকে চিকিৎসাক্ষেত্রেও নতুন কোনো গবেষণার তথ্য সরকার পায়নি।অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন)
গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে গবেষণার তথ্য জরুরি। তবে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য গবেষণার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায়নি। অন্যদিকে চিকিৎসাক্ষেত্রেও নতুন কোনো গবেষণার তথ্য সরকার পায়নি। মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা—দুটি ক্ষেত্রেই মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করেছে সরকার।
জনস্বাস্থ্য ও করোনাবিষয়ক গ্রহণযোগ্য ওয়েবসাইটগুলোতে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনাবিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে প্রায় দেড় শ। অধিকাংশ গবেষণা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক। চিকিৎসা বা ক্লিনিক্যাল বিয়য়ে গবেষণা তুলনায় অনেক কম।
মানসম্পন্ন গবেষণার পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, গবেষণার ফলাফল যেন নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছায়, এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। গবেষণার ফলাফল যা–ই হোক, তা মেনে নেওয়ার মানসিকতাও নীতিনির্ধারকদের থাকতে হবে।