টিকায় পিছিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁরা জানেন না কীভাবে টিকার নিবন্ধন নিতে হয়।

করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

ময়না রানী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ৬৫ বছর বয়সী এই নারী প্রতিদিন রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার সড়ক পরিষ্কার করেন। তিনি জানেন না কীভাবে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে হয়।

ময়না রানী থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগের গণকটুলী সিটি কলোনির হিন্দুপল্লিতে। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘আমি করোনার টিকা নিতে চাই। মহল্লায় টিকা নিবার লাইগা মাইকিং করছে। কিন্তু কই গেলে পামু এইটা জানি না।’

দেশে করোনার টিকা নেওয়ার নিবন্ধন শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। আর গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ৫৫ লাখ মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। তবে এই বড় কার্যক্রমের দুই মাস পরও টিকার অগ্রাধিকারে ঠাঁই হয়নি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজটিতে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কাজ করছেন অন্তত ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে করপোরেশন থেকে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেই। তবে তাঁদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম সাইদুর রহমান বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা বয়সবিষয়ক সমস্যা আছে। নিবন্ধন করতে গেলে সেগুলো প্রয়োজন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের করোনার টিকা দিতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা আছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. বদরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, টিকা নিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আগ্রহ নেই। এ জন্য তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একটা বড় অংশের বাস হাজারীবাগের গণকটুলীর সিটি কলোনিতে। সেখানে হরিজন সম্প্রদায়সহ সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার মানুষ থাকেন। এর বাইরে গণকটুলী এলাকার আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ভাড়া বাসায় আরও দুই হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বসবাস। মহল্লার অন্তত ৪০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় শুধু তিনজন টিকা নিয়েছেন। সেটিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। টিকা না নেওয়া একজন শাকেশ বাগমার প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন তাঁর আছে। তবে কীভাবে নিবন্ধন করতে হয়, তা জানা নেই।

গণকটুলীতে গত বছর জুনের দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মারা গেছেন বলে দাবি করেন ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিন্নাত আলী। তিনি মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় ক্যাম্প করে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের টিকা দেওয়ার আলাদা কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুজন মুখপাত্রের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক এ এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সিটি করপোরেশনের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের টিকার ব্যবস্থা করা।