জরুরি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় মডার্নার টিকা
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মডার্নার কোভিড-১৯ টিকাটি জরুরি ব্যবহারের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। জরুরি ব্যবহারের জন্য টিকাটি তালিকাভুক্তির ফলে যেসব দেশ কার্যকর টিকা পেতে সমস্যায় পড়ছিল, তারা দ্রুত তা পেতে পারবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোয় টিকা দেওয়া সহজ হবে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মডার্নার টিকাটিসহ এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি টিকা জরুরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জরুরি ব্যবহারের জন্য মডার্নার টিকাটির অনুমোদন দিয়েছিল। এরপর গত ৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি ইউরোপজুড়ে মডার্নার টিকাটি বাজারজাতকরণ বৈধ ঘোষণা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস অন ইমুনাইজেশন (এসএজিই) পরীক্ষা করে দেখেছে, মডার্নার টিকাটি ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ কার্যকর।
অন্য যেসব টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অনুমোদন পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও জ্যানসেনের টিকা।
গত বৃহস্পতিবার মডার্না কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ২০২২ সাল নাগাদ ৩০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের আশা করছে। এ ক্ষেত্রে নতুন তহবিল জোগানোর প্রতিশ্রুতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন কারখানাগুলোয় সরবরাহ বাড়াবে।
এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মডার্নার টিকা বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর বলে এক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে। নানা রোগের কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। তবে মডার্নার টিকাটি বয়স্ক ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার এ গবেষণা প্রকাশ করে মার্কিন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানায়, ফাইজার ও মডার্নার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টিকা দুটিই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম তথ্য-উপাত্ত হাজির করে যে কোভিড-১৯-এর গুরুতর অসুস্থতা রোধ করতে পারে সেগুলো। এ দুই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সেটি দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিরা টিকার সব ডোজ নিলে কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৯৪ শতাংশ কমে যায়। সিডিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, এক ডোজ নেওয়ার পর সেই ঝুঁকি কমে ৬৪ শতাংশ।
মডার্নার টিকা ফাইজারের টিকা থেকে অন্তত দুটি ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে। মডার্নার টিকা সংরক্ষণ বা সরবরাহের জন্য চরম শীতল অবস্থা বজায় রাখতে হয় না। অতি শীতল অবস্থার জন্য এর সরবরাহ ও মজুতের জন্য বিশেষ রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না।
ফলে সহজেই যেকোনো স্থানে তা সরবরাহ করা যাবে এবং সংরক্ষণ করা যাবে নিয়মিত রেফ্রিজারেটরে। মডার্নার টিকা ব্যবহারের আগে কোনো মিশ্রণেরও প্রয়োজন হয় না।
এই টিকা উদ্ভাবনে মডার্নাকে সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ। দেশটিতে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
টিকাটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মডার্না জানিয়েছে, এটি বেশ সহনীয়। প্রথম ডোজ প্রয়োগের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবসাদ, মাংসপেশিতে ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ইনজেকশন যে জায়গায় প্রয়োগ করা হয়, সেখানে ব্যথা ও লালচে ভাব দেখা গেছে। টিকাটির দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের পর এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া গুরুতর কিংবা নতুন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
গত বছরের মার্চে প্রথম কোম্পানি হিসেবে মানবদেহে নতুন টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না। এ টিকা ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ভিত্তিক, যা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান বহন করে এবং শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়।