২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গুরুতর অসুস্থ ১০ জনের ৮ জনই ‘বিটা’ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন

টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পর যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ধরা পড়া করোনার বিটা ধরন পাওয়া গেছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত এপ্রিল ও মে মাসে ভর্তি হওয়া ২৪ জন রোগীর নমুনা থেকে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। এসব রোগীর ৭৫ শতাংশই করোনার ‘বিটা’ ধরনে (দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া ধরন) আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ২৫ শতাংশ আক্রান্ত ছিলেন ‘আলফা’ ধরনে (যুক্তরাজ্যে পাওয়া ধরন)।

গবেষণায় দেখা যায়, ওই ২৪ জন রোগীর মধ্যে পাঁচজন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার ২ সপ্তাহ পরেই তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হন। এঁদের সবার মধ্যে বিটা ধরন পাওয়া যায়। এ ছাড়া ২৪ জনের মধ্যে ১০ জন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেন। এ ১০ জনের ৮ জনই বিটা ধরনে আক্রান্ত ছিলেন।

পাশাপাশি আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া দুজন মারা গেছেন। এঁদের একজন আলফা ও আরেকজনের বিটা ধরন পাওয়া যায়। আর বাকি ১৪ জন করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন।

করোনার জীবনরহস্য উন্মোচনবিষয়ক এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। প্রধান গবেষক ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও মো. আবদুর রব। সহ-গবেষক হিসেবে ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মিনহাজুল হক ও রাজদীপ বিশ্বাস। এ ছাড়া গবেষণাটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান।

গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও যুক্ত ছিল চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জিনোমিকস দল। গবেষণায় প্রাপ্ত সিকোয়েন্স–ডেটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভান্ডার সংস্থা ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’-তে গৃহীত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে সংস্থাটি সিকোয়েন্সগুলো তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

গবেষণায় বলা হয়, ২৪ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীর বয়স ছিল ৪০ বছরের নিচে। বাকি ৩০ শতাংশ রোগীর বয়স ৪১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। বিটা ধরনে আক্রান্তদের জটিলতা বেশি ছিল। রোগীরা জ্বর, কফ, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। আর আলফা ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে স্বল্প উপসর্গ ছিল।

গবেষকেরা জানান, এপ্রিল ও মে মাসে শতাধিক করোনা রোগী ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে অধিক ও স্বল্প জটিলতা রয়েছে এমন ২৪ জনকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর তাঁদের নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়।

প্রধান গবেষক এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, গত এপ্রিল ও মে মাসে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আসা জটিল কোভিড রোগীদের একটি বড় অংশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরা পড়া করোনার বিটা ধরনে আক্রান্ত ছিলেন। এ ধরনটি জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। গবেষণাটি চলমান রয়েছে। তিন মাস পর আরও বিশদভাবে নতুন তথ্য জানা যাবে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সাতটি ল্যাব ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১ হাজার চারটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫৮ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলায় করোনায় মারা গেছেন দুজন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডিতে প্রথম থেকেই করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি আরও কিছু হাসপাতাল রয়েছে।