টিকার দুই ডোজের ব্যবধান ১৬ সপ্তাহ করার চিন্তা
আরও ৬ লাখ টিকা উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছে চীন। সরকার টিকা নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা কী করছে, তা মানুষকে জানানোর পরামর্শ জাতীয় কমিটির।
প্রথম ডোজের ১৬ সপ্তাহ পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টিকা প্রয়োগ ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে দুই ডোজের মধ্যকার সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সর্বশেষ সভাতেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ১৮ মে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, প্রথম ডোজের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের ভেতরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যায়। কোনো কোনো দেশ প্রথম ডোজের ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করছে। তবে টিকা পরিস্থিতি ও বিকল্প পরিকল্পনা কী নেওয়া হয়েছে, তা দেশের মানুষকে অবহিত করার পরামর্শও দিয়েছে কমিটি।
# এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
# দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জনকে।
# ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রথম ডোজ দেওয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিলে এই টিকা বেশি কার্যকর হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য অনেকটা নিজেদের কাজের সুবিধার জন্য দুই ডোজের মধ্যকার সময় নির্ধারণ করেছেন এবং একাধিকবার তা পরিবর্তনও করেছেন।
দেশে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, দুই ডোজের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চার সপ্তাহের ব্যবধান বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিযুক্ত।
৭ ফেব্রুয়ারি টিকা গ্রহণকারীদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য ৮ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন পরই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বলে, দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পরে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়।
তবে টিকার মজুত শেষ পর্যায়ে চলে আসা এবং শিগগিরই নতুন করে টিকা আনার সম্ভাবনা কম থাকায় দুই ডোজের মধ্যকার সময় বাড়ানোর কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সময় বাড়ানোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক তথ্যও জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা ‘কোভিশিল্ড’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জনকে। ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্রে টিকা ফুরিয়ে গেছে। ওই সব কেন্দ্র থেকে যাঁরা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাঁরা কবে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন, তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। এ নিয়ে কোথাও কোথাও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার সময় যদি ১৬ সপ্তাহ করা সম্ভব হয়, তাহলে বাড়তি সময় পাওয়া যাবে। এই সময়ের মধ্যে টিকার জোগাড়ও হয়ে যেতে পারে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও অধিদপ্তরের টিকাবিষয়ক কমিটির প্রধান মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত ও ইউরোপের দু-একটি দেশে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। আমরা এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিনি। ন্যাশনাল ইম্যুনাইজেশন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট গ্রুপের পরামর্শ চেয়েছি। অন্য দেশের অভিজ্ঞতাও জানার চেষ্টা করছি।’
দেড় সপ্তাহ আগে চীনের উপহার দেওয়া ৫ লাখ টিকা দেশে আসে। গতকাল শুক্রবার আরও ৬ লাখ টিকা উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছে চীন। গতকাল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উয়াং ইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের টেলিফোনে কথা হয়। সেই সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই উপহারের টিকার কথা বলেন বলে চীনা দূতাবাসের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে হলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দিতে হবে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ সপ্তাহে দ্বিতীয় ডোজের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা কোনো দেশে হয়েছে বলে জানা যায়নি। একাধিক নতুন টিকা বাজারে আসার কারণে ইউরোপ-আমেরিকার একাধিক দেশে অক্সফোর্ডের টিকার ব্যবহার করা হচ্ছে না। সরকারের উচিত, আপাতত ১৫-১৬ লাখ টিকা ওই সব দেশ থেকে দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা।