করোনা পরীক্ষার চাপ বাড়ছে
দেশে ২১৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে নমুনা দিতে বেশি লোকজন আসছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার চাপ বাড়ছে। পরীক্ষার পাশাপাশি নতুন রোগী ও শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। কয়েক দিন ধরে রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ঘরে।
অবশ্য এখন দৈনিক যে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘিরে। এর বাইরে আছেন অনেক বিদেশযাত্রী। এ দুই ক্ষেত্রে যাঁদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের মূলত কোনো লক্ষণ–উপসর্গ নেই। তাঁরা আক্রান্ত নন, এটা নিশ্চিত করতেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ অংশ বাদ দিলে রোগী শনাক্তের হার আরও বাড়বে।
এখন দেশে ২১৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি ও বেসরকারি সব পরীক্ষাকেন্দ্রেই করোনা পরীক্ষার চাপ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে নমুনা দিতে বেশি লোকজন আসছেন। কিছু কিছু কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, লোকজন পরীক্ষা করাতে সকাল থেকে ভিড় করছেন। এখন ২০০ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেকে আসছেন, কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এক মাস আগে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯০ থেকে ২৮০টির মতো। গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৮৩টি।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০০টির মতো। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে পরীক্ষা হয়েছে ৫৫২টি। ল্যাবএইড লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
চট্টগ্রামেও করোনার নমুনা পরীক্ষার চাপ বেড়েছে। চট্টগ্রামের ৯টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে নমুনা সংগ্রহ করা হয় অন্তত ১০টি স্থানে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল একটি। গতকাল রোববার নমুনা দেওয়ার জন্য এ হাসপাতালে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ হাসপাতালে বিদেশযাত্রীদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে দুই সহস্রাধিক লোক নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন এখন। আগে এটা অনেক কম ছিল। শনিবার চট্টগ্রামে ৯১০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ১১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে মোট নমুনা পরীক্ষা ৯০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে ছিল। টানা তিন সপ্তাহ ধরে নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে। সংক্রমণের ৫২তম সপ্তাহ (২৮ ফেব্রুয়ারি—৬ মার্চ) থেকে ৫৪তম সপ্তাহ (১৪ মার্চ—২০ মার্চ) পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪তম সপ্তাহে পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬ জনের নমুনা। এটি এখন পর্যন্ত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চসংখ্যক নমুনা পরীক্ষার রেকর্ড।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সপ্তাহে এক লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গত বছরের জুন-জুলাইয়ে। ওই সময়ও প্রতি সপ্তাহে লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
এর আগে ১৭ মার্চ এক দিনে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ২৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এখন দৈনিক ১৮ হাজারের বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ায় শনাক্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশ পরীক্ষা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ১০ দিনের অনুষ্ঠান ঘিরে দেশি-বিদেশি অতিথি, তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি, অংশগ্রহণকারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। তারপরও রোগী শনাক্তের হার ছিল লক্ষণীয়। গত সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ, যা গত ১৩ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রকৃতপক্ষে শনাক্তের হার আরও বেশি হবে।
নতুন আক্রান্ত ২,১৭২, মৃত্যু ২২
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১ হাজার ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ১৭২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৮ হাজার ৬৯০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর মোট সুস্থ হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৪০৫ জন। শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর সুস্থ হওয়ার হার ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ।