এ সময়ে শিশুর জ্বর-কাশি
মৌসুম বদলের এই সময়ে প্রতিবছরই শিশুরা জ্বর, সর্দিকাশি বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক। শিশুদের ক্ষেত্রে করোনার উপসর্গ হয় মৃদু। তবে অনেক শিশুই নীরব বাহক। অর্থাৎ তেমন উপসর্গ না থাকলেও সে ভাইরাসটি পরিবারের অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিশুরা আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বমি, ডায়রিয়া, ক্রুপ অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিস হওয়াও বিচিত্র নয়।
আবার শিশুদের ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তখন কান পাকা, সাইনুসাইটিস, লোবার নিউমোনিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। মনে রাখা দরকার, করোনা নিয়ে সবাই ব্যতিব্যস্ত হলেও এ সময় শিশুর জ্বরের নানা কারণ থাকতে পারে। এটা ডেঙ্গুর মৌসুম। তা ছাড়া হাম, হুপিং কাশি, টাইফয়েড ইত্যাদির ঝুঁকিও রয়ে গেছে। কিছু কিছু ভাইরাস বিশেষ কিছু উপসর্গ তৈরি করে। যেমন:
ত্বকে র্যাশ বা দানা: ডেঙ্গু, হারপিস, হাম, চিকেন পক্স, এডিনো, রুবেলা ইত্যাদি।
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস: করোনা সংক্রমণে কনজাংটিভাইটিস হতেও দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া এডিনো, পেরা ইনফ্লুয়েঞ্জায়ও চোখ ওঠে।
গলার গ্রন্থি ফোলা: টনসিলাইটিস, রুবেলা, এবস্টেন বার, সাইটোমেগালো ইত্যাদি।
ক্রুপ কাশি: ইনফ্লুয়েঞ্জা, পেরা ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম।
আন্ত্রিক উপসর্গ: রোটা ভাইরাস, এডিনো, এনটেরো ভাইরাস।
অরুচি, জন্ডিস: হেপাটাইটিস।
মেনিনজাইটিস: মাম্পস, হামের পর হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে হিমোফিলাস ও মেনিনজোকক্কাস দিয়েই হয় সাধারণত।
কাজেই এ সময় শিশুর এ রকম জ্বর-কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করুন। বাড়িতে বা আশপাশে কারও করোনা আছে কি না খেয়াল করুন। প্রয়োজনে করোনা পরীক্ষা করুন। করোনা হলেও ভয়ের কিছু নেই। শিশুদের বেলায় এর তেমন কোনো চিকিৎসার বা হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে সেবা–শুশ্রুষা করুন।
• পুষ্টিকর খাবার দিন। স্বাভাবিক সব খাবারের সঙ্গে প্রচুর তরল খাবে। বুকের দুধ পান করলে তা চালিয়ে যাবে।
• জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল দিন। অন্য কোনো ওষুধ দেবেন না।
• শ্বাসকষ্ট, কিছু খেতে না পারা, বমি বা ডায়রিয়া, খিঁচুনি, অচেতনভাব, নেতিয়ে পড়া ইত্যাদি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিন।
• শিশুর নিয়মিত টিকা সম্ভব হলে চালিয়ে যান। টিকাকেন্দ্রগুলো চালু আছে। সম্ভব হলে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে দিন।
• যেসব শিশুর টাইপ-১ ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, জন্মগত হৃদ্রোগ, ক্যানসার আছে, তাদের বেলায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন। তাদের এ সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিলে ভালো। শিশুদের বাড়িতেই রাখুন। পরিচ্ছন্ন রাখুন।
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ