‘আমার স্বামী আন্দোলনে যাননি, কেন তাঁকে গুলি করে ঝাঁঝরা করা হলো’
‘আমার স্বামী তো ছিলেন পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার। শ্রমিক আন্দোলনে যাননি। তিনি শ্রমিকনেতাও ছিলেন না। তাহলে কেন তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে মেরে ফেলল?...আমার মেয়ে এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে?’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন নার্গিস পারভিন। নার্গিসের স্বামী জালাল উদ্দিন (৪০) গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গত বুধবার সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জালাল উদ্দিন শরীরে ছররা গুলি লাগে। তিনি ইসলাম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন। একই সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার পোশাকশ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০) মারা যান।
নার্গিস পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে আমার স্বামী কারখানায় গিয়েছিলেন। আন্দোলনের কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় তিনি বাসায় ফিরছিলেন। ঠিক বাসার গলির সামনেই জালালকে গুলি করে ঝাঁঝরা করল। কেন আমার স্বামীকে এভাবে মেরে ফেলা হলো?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নার্গিস বলেন, ‘ওরা আমার কলিজা ছিদ্র করেছে। আরেকটা বুলেট মেরে আমার বুকটাও ছিদ্র করে দাও। স্বামীকে ছাড়া সন্তান দিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’
নার্গিস হাসপাতালের মর্গে বসে যখন আহাজারি করছিলেন, তখন তাঁর পাশে বসে কাঁদছিল একমাত্র সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া। সে গাজীপুরের একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। জান্নাতুল বারবার মায়ের কাছে জানতে চাচ্ছিল তার বাবার কী হয়েছে।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন। তাঁরা সাত ভাইবোন। গুলিতে বড় ভাইয়ের আহত হওয়ার খবর শুনে দুবাই থেকে সকালে দেশে ফিরে এসেছেন জালালের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম। বিমানবন্দরে নেমেই বড় ভাইয়ের মৃত্যু খবর শোনেন তিনি। হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে ভাতিজিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন তিনি। সাইফুল বলছিলেন, ‘খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনকে বারবার ফোন করেছি। সবাই আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ভাই সুস্থ আছে বলেছে। কেউ আমাকে আসল তথ্য দেয়নি। জরুরি টিকিট কেটে দেশে ফিরেছি। কিন্তু ভাইকে আর জীবিত দেখতে পেলাম না।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জালালের সঙ্গে বুধবার সর্বশেষ কথা হয় স্ত্রী নার্গিসের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল-মামুনের। তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে জালাল আমাকে বলল, “ভাই, আমার কিছু হলে আমার মেয়েটাকে আপনি দেখে রাখবেন।”’