ঠাকুরগাঁও থেকে রাতেই চলে আসেন কয়েক হাজার নেতা-কর্মী

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা উঠেছেন নগরের উত্তম বানিয়াপাড়ার একটি গুদামে। তাঁদের জন্য চলছে রান্না। আজ ভোরে তোলাছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশের এক দিন আগে আজ শুক্রবার সকাল থেকে রংপুর জেলা বাস মালিক সমিতির ঘোষণা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গণপরিবহনে এ ধর্মঘট শুরু হওয়ার আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়িতে করে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা রংপুর চলে এসেছেন। তাঁরা রংপুর নগরের বিভিন্ন স্থানে গুদামঘর, স্কুলসহ খোলা আকাশে গাছের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাস মালিক সমিতির নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা ঠাকুরগাঁওয়ের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন নগরের উত্তম বানিয়াপাড়ার একটি গুদামে। আজ ভোরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে বিএনপির প্রায় আট হাজার নেতা-কর্মী গতকাল দিবাগত রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন রংপুর নগরের উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকার একাধিক গুদামঘরে। সেখানে খোলা মাঠে চুলা জ্বালিয়ে হাঁড়িতে সবজি খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। আজ সকাল সাতটায় এ দৃশ্য দেখা গেছে।

ঠাকুরগাঁও থেকে আগত নেতা-কর্মীরা জানান, বাস বন্ধের ঘোষণা হবে, এটা তাঁরা আগেই জানতেন। তাই জেলার নেতারা প্রস্তুত ছিলেন যে দুই দিন আগেই যেতে হবে। সবাই বিছানার চাদর, কম্বলসহ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে এসেছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতেই প্রায় আট হাজার নেতা-কর্মী আমরা ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছি। আরও পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার লোক দুপুরের মধ্যে চলে আসবে। আমরা এসেছি বাস, ট্রাক, পিকআপ, মোটরাইকেলে। রাত ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা দিয়ে আড়াইটা-তিনটার দিকে রংপুরে এসে পৌঁছেছি। পথে বাধা পেলেও আমাদের হাজার হাজার মানুষ তা অতিক্রম করে রংপুরে ছুটে এসেছি গণসমাবেশের দুই দিন আগেই।’

আজ সকাল সাতটার দিকে সরেজমিনে রংপুর নগরের উত্তম বানিয়াপাড়া এলাকায় দেখা গেল, সেখানে চারটি বড় বড় গুদামে ওই নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ঘরের মেঝেতে কেউ চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছেন, কেউ নিয়ে এসেছেন কম্বল। গুদামের ভেতর পাটের বস্তা বিছিয়ে শত শত নেতা-কর্মীকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘুমজড়ানো চোখে-মুখে তাঁদের স্বস্তিও রয়েছে। কেউ কেউ গাছের নিচে বস্তা বিছিয়ে শুয়ে আছেন।

সেখানকার একটি খোলা জায়গায় সাতটি চুলায় বড় বড় হাঁড়িতে সবজি খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। যেন উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছে রংপুর। রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরের পথে আসতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রংপুরে আসতে পারায় তাঁদের সেই শঙ্কা আপাতত কেটে গেছে বলে জানালেন তাঁরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মেহেদী হাসান রাব্বী বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যারের এলাকার লোক আমরা। আমরা রাত ১২টায় রওনা দিছি। অনেকে ট্রাকে আসছি, বাসে আসছি, আমরা রাতেই আট হাজার লোক ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরে উপস্থিত হয়েছি।’

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া এলাকার বিএনপির সদস্য শাহিন আলম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরে আসতে বিভিন্ন জায়গায় বাধা পেয়েছি। সমস্যা করেছে। তারপরও আমরা সব বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। জনগণের একটি সরকার কায়েম করার জন্য আমাদের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে উপস্থিত হয়েছি।’

ঠাকুরগাঁও জেলার মতো বিভাগের আট জেলার নেতা-কর্মীরাও গতকাল রাতেই নগরের বিভিন্ন এলাকার খালি গুদামঘরসহ বাসাবাড়িতে অবস্থা নেন।