দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। তবে সহনীয় দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। নির্ধারিত সরকারি ফির বাইরে ঘুষ দিয়ে কাউকে কাউকে সংযোগ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৮ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগ করেছেন উচ্চ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে। আর ১৯ শতাংশের অভিযোগ লোডশেডিং নিয়ে।
গুণগত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে পরিচালিত গ্রাহক সন্তুষ্টি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এ জরিপ করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, নতুন বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাহক। তবে ৯০ শতাংশ গ্রাহক অতিরিক্ত টাকা ছাড়াই সংযোগ পেয়েছেন।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনলাইনের মাধ্যমে বা মোবাইলে সেবার ব্যবহার বাড়ছে গ্রাহকদের মধ্যে। এ প্রক্রিয়ায় বিল পরিশোধে ৯৯ শতাংশ গ্রাহক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
১৫ হাজার ২৪৫ জন গ্রাহকের ওপর জরিপটি করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৯১ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক খাতের। বাকিরা শিল্প, বাণিজ্যিক ও কৃষিসেচ খাতের।
এর মধ্যে দেশের ছয় বিতরণ সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলসি (নেসকো) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহক আছেন। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপে ৩৪ শতাংশ গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনে গড়ে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানিয়েছেন ৫৮ শতাংশ গ্রাহক। আর এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানিয়েছেন ২১ শতাংশ গ্রাহক। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সেবা নিয়ে বিতরণ সংস্থার কাছে ফোনে বা সরাসরি গিয়ে নিয়মিত অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগ করেন বিদ্যুৎ–বিভ্রাট নিয়ে। আর ৩৪ শতাংশ গ্রাহক লোডশেডিং নিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধান পাওয়ার ক্ষেত্রে ৮৪ শতাংশ গ্রাহক সন্তুষ্ট।
জরিপ উপস্থাপনের পর বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, জরিপ পরিচালনার সময়টাতে লোডশেডিং কম ছিল। জুলাই-আগস্টে লোডশেডিং বেশি হয়েছে। এটা হয়েছে মূলত জ্বালানিসংকটের কারণে। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাওয়ার দাবি ন্যায্য। এটা নিশ্চিত করা হবে।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন যত করা যাবে, গ্রাহকের সেবা বাড়বে। সেবা নিতে মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে যেতে হবে না। গ্রাহক সন্তুষ্টি এ খাতের মূল্য লক্ষ্য হওয়া উচিত।
পাওয়ার সেলের পক্ষ হয়ে গবেষণাকাজটি করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মাইডাস। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
এতে বলা হয়, আগে দিনে ১০–১২ বার লোডশেডিং হলেও এখন ১–২ বারে নেমে এসেছে। অভিযোগ কেন্দ্র আরও বেশি আধুনিক করা উচিত। ২৪ ঘণ্টা সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। পোস্ট পেইড মিটার গ্রাহকদের দ্রুত প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করা দরকার।