সংখ্যালঘু, জামায়াতের ভোটারসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক তথ্য সংগ্রহে পুলিশ

ব্যালট বাক্স
প্রতীকী ছবি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। সংশ্লিষ্ট আসনের কোনো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ কি না, কেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো কেমন, কোনো কেন্দ্রে অতীতে কখনো সহিংসতা হয়েছে কি না, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও জামায়াতে ইসলামীর ভোটার কত—এসব বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২৪ জুলাই এসবির প্রধান কার্যালয় থেকে জেলা পুলিশসহ এসবির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এসব তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আগামী ২ আগস্টের মধ্যে তথ্যগুলো নির্দিষ্ট ছকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

একাধিক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এমন নির্দেশনা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টি এসবির একটি রুটিন কাজ। কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না, ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ কি না—এসব তথ্য নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানায় এসবি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হয়। সে জন্য কোন আসনে কত সংখ্যালঘু ভোটার আছেন, সেই তথ্য জানা দরকার। ভোটের আগে ও পরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন এলাকায় তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নজরদারি প্রয়োজন। এসব তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার প্রয়াত মাহবুব তালুকদার তাঁর ‘নির্বাচননামা’য় লিখেছেন, নির্বাচন এখন নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চলে গেছে। তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে অতীতে বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে। সম্ভবত নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পুলিশ এসব তথ্য সংগ্রহ করছে।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে তাঁকে অবহিত করা হয়নি।

আরও পড়ুন

আসনভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের তথ্য চেয়ে সারা দেশে জেলা পুলিশকে পাঠানো এসবির চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্রমতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন আসনভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের তথ্য নির্দিষ্ট ছকে ই–মেইল করে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ছকে চাওয়া তথ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট আসনের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র কতগুলো, ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামোর বিবরণ, থানা থেকে কেন্দ্রের দিক ও কেন্দ্রভিত্তিক দূরত্ব। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কখনো সহিংসতা হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে সেটি জাতীয় নাকি স্থানীয় নির্বাচনে।

নির্দিষ্ট আসনে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভোটারদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো পুরুষ ও নারী ভোটার, সংখ্যালঘু ভোটার, জামায়াতে ইসলামীর ভোটার ও হিজড়া ভোটারের সংখ্যা।

আরও পড়ুন

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার প্রয়াত মাহবুব তালুকদার তাঁর ‘নির্বাচননামা’য় লিখেছেন, নির্বাচন এখন নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চলে গেছে। তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে অতীতে বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে। সম্ভবত নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পুলিশ এসব তথ্য সংগ্রহ করছে।

বদিউল আলম মজুমদারের মতে, কোথায় কত সংখ্যালঘু ভোটার আছে, হিজড়া ভোটার কত আছে, এগুলো তো বিভিন্ন জরিপেই উঠে এসেছে। কোন দলের কত ভোট, এসব তথ্য সংগ্রহ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।