দুই মেয়ের সঙ্গে মা–বাবা’র দেখা করার সময় ও ব্যবস্থাপনা ঠিক করলেন আদালত

মা ও বাবার সঙ্গে জাপানি দুই শিশুপ্রথম আলো ফাইল ছবি

জাপানি দুই শিশুর সঙ্গে তাদের মা–বাবার দেখা-সাক্ষাৎ, সময় কাটানো ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। দুই শিশুর হেফাজত নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শিশুদের মা–বাবার করা পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

দুই শিশুর মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো আর বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ। বড় মেয়েটি জাপানে মায়ের হেফাজতে ও মেজ মেয়েটি বাংলাদেশে বাবার হেফাজতে রয়েছে।

আদেশ অনুসারে, বছরে দুবার বড় মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেন শিশুদের মা। এলে আসা-যাওয়ার দুই দিন বাদে পাঁচ দিন তাঁরা অবস্থান করবেন। আসার তিন সপ্তাহ আগে মা শিশুদের বাবাকে তা অবহিত করবেন, যাতে বাবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত সময় পান। বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে বড় মেয়ে ও তার মায়ের বাংলাদেশে আসা-যাওয়া, থাকা, যাতায়াত ও খাবার খরচ বহন করবেন শিশুদের বাবা। বাংলাদেশে অবস্থানের সময় প্রতিদিন দুই শিশু এবং তাদের মা–বাবা একত্রে সাত ঘণ্টার জন্য সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে বাবার হেফাজতে থাকা মেজ মেয়েটি মায়ের কাছে এবং মায়ের হেফাজতে থাকা বড় মেয়েটি বাবার কাছে পুরো রাত থাকতে পারবে না।

ইমরান ও এরিকোর দুই শিশুর হেফাজত নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিশুদের বাবার করা এক আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মেজ মেয়ে তার বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে। আর বড় মেয়ে তার মা এরিকোর হেফাজতে থাকবে। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মা এরিকো নাকানো ও বাবা ইমরান শরীফের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।

আদালতে এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রাশনা ইমাম।

আদেশের পর এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই পক্ষের সম্মতিতে আপিল বিভাগ শিশুদের সঙ্গে তাদের মা–বাবার দেখা-সাক্ষাৎ, সময় কাটানো ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুদের সঙ্গে তাদের মা-বাবার দেখা-সাক্ষাৎ ও সময় কাটানোর এই ব্যবস্থাপনা বহাল থাকবে। এই আদেশ উভয় পক্ষ মেনে চলবে বলে প্রত্যাশা করি।’

অবশ্য ইমরানের আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন, যা দুই পক্ষকে মেনে চলতে হবে। মাকে জাপান থেকে বছরে অন্তত দুবার বড় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে। এসে অন্তত পাঁচ-সাত দিন থাকতে হবে। দুবার দেশে আসা-যাওয়া, থাকা ও খাবার খরচ বাবা বহন করবেন। আসার পর প্রায় প্রতিদিনই দেখা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, সাত ঘণ্টার মতো। পুরো পরিবার মিলে একসঙ্গে কোথাও দেখা করতে পারবে।