কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ‌, যান চলাচল বন্ধ

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরাছবি : তানভীর আহাম্মেদ

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার বিকেলে আবারও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এর ফলে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

এর আগে বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর ঘুরে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশীবাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগে আসে।

মিছিলটি শাহবাগে আসার আগেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশও জাদুঘরের সামনের সড়কে মিছিলটি আসার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর ঠিক আগেই পুলিশ সদস্যরা শাহবাগের সড়কে অবস্থান নেন। তবে তাঁরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেননি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মূল মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখার সময় শাহবাগ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘তারুণ্যের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন। রাস্তার এক পাশে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে আগামীকাল রোববার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালনের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬৩টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া আজকের কর্মসূচির পর আগামীকালের মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিও ঘোষণা করবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এক শিক্ষার্থী জানান, আজকের কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চলতে থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। আন্দোলন থেকে সংস্কারের দাবি উঠলেও ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়৷
পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে কয়েক দিন বিক্ষোভের পর ১০ জুন দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
দাবি পূরণ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা টানা আন্দোলন করছেন।