হাতের মুঠোয় ট্যাক্সি-বাইক
একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী রুবাইয়া হক। অফিস বনানী। কাজ শেষে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরতে নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়তে হতো তাঁকে। রুবাইয়ার কথায়, ‘অফিস ছুটির সময়ে বাসে খুব ভিড় হয়। ট্যাক্সি-সিএনজিওয়ালাও সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ ভাড়া চায়। এখন তাই ফোনে দুই-তিনটা সার্ভিসের অ্যাপ নামিয়ে নিয়েছি। অ্যাপে অনুরোধ পাঠালেই গাড়ি চলে আসে। দরদামেরও ঝামেলা নেই।’
ইদানীং ঢাকায় বেশ কিছু স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক বাহন সেবা চালু হয়েছে। ভিড়ে-ঠাসা বাস আর রিকশা-অটোরিকশাচালকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে অনেকেই এখন এই সেবা বেছে নিচ্ছেন। হাত তুলে আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ভাড়ার ট্যাক্সি ও বাইক।
ঢাকায় রাস্তায় মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল, এই দুই ধরনের বাহনে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। সেবা পেতে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে নিতে হবে। অ্যাপে গন্তব্য নির্ধারণ করে ফরমাশ পাঠালে গ্রাহক যেখানে আছেন, নিকটস্থ চালক সেখানে পৌঁছে যাবেন। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দূরত্ব আর যানজট মিলে কত খরচ হলো তা-ও জানা যাবে অ্যাপের পর্দায়।
উবার: গত বছর নভেম্বরে বহুজাতিক ট্যাক্সিসেবা প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ ঢাকায় যাত্রা শুরু করে। অ্যাপল স্টোর ও গুগল প্লে থেকে অ্যাপটি বিনা মূল্যে নামানো যাবে। ফোন নম্বর এবং ই-মেইল ব্যবহার করে অ্যাপটি সক্রিয় করতে হবে।
উবারের বেইজ ভাড়া ৫০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২১ টাকা আর ওয়েটিং চার্জ মিনিটে তিন টাকা। যাত্রা শুরুর আগে গন্তব্য ঠিক করে সম্ভাব্য ভাড়া জানা যাবে। ২৪ ঘণ্টাই এই সেবা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে উবার কর্তৃপক্ষ। নগদ টাকা বা কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করা যাবে।
চলো: যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে দেওয়ান শুভ ২০১৫ সালে ‘চলো’ শুরু করেন। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই সেবা চালু আছে। অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ট্যাক্সিসেবার পাশাপাশি অ্যাপ, ই-মেইল বা ফোনে গাড়ি আগে থেকে বুকিং দেওয়ারও সুযোগ আছে। ‘প্রিমিয়াম’ শ্রেণিতে বেইজ ভাড়া ৩০০ টাকা এবং প্রতি মিনিটে পাঁচ টাকা। আর ‘ইকোনমি’তে বেইজ ভাড়া ১০০ টাকা। প্রতি মিনিটে চার টাকা। এ ছাড়া নির্ধারিত ভাড়ায় সারা দিনের জন্যও তাদের সেবা নেওয়া যাবে।
পাঠাও: অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক ট্যাক্সিসেবা ‘পাঠাও’-এর কাস্টমার রিলেশন ব্যবস্থাপক সালেহা ফারহাজ আজিজ বলেন, ঢাকার যানজটের কথা মাথায় রেখে এই সেবা চালু করেছেন তাঁরা। ঢাকায় রাস্তায় বর্তমানে তাদের পাঁচ শ চালক আছেন, যাঁরা চুক্তি ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। পাঠাও-এর বেইজ ভাড়া ২০ টাকা এবং এরপর প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দশ টাকা। ভাড়া নগদে পরিশোধ করা যাবে।
সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সেবা পাওয়া যাবে। সালেহা বলেন, দিনে হাজারের বেশি গ্রাহক তাঁদের সেবা নিচ্ছেন। অ্যাপের মাধ্যমে সেবা চাওয়ার পর গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছাতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। ঢাকায় অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও আছে ‘আমার রাইড’, ‘আমার বাইক’, ‘শেয়ার এ মোটরবাইক-স্যাম’ ইত্যাদি।
ব্যবসায়ী মাসুদ রানা নিয়মিতভাবে পরিবহন অ্যাপগুলোর সেবা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, যাঁদের নিজস্ব বাহন নেই, এ ধরনের সেবাগুলো তাঁদের জন্য খুব সুবিধাজনক।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) এই সেবাগুলোকে এখনো অনুমোদন দেয়নি। বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়ায় মোটরবাইক চালানো যাবে না। এ ছাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০’-এ বলা হয়েছে, ট্যাক্সিক্যাবকে অবশ্যই কোম্পানিভিত্তিক পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে চালু থাকা সেবার অনেকগুলোই নিজস্ব বাহন নয়, বরং গাড়ির মালিকের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিতে চলছে।
এ নীতিমালায় কোম্পানির নিজস্ব রেডিও টেলিফোন লিংক, সেলফোন ও জিপিএসের ব্যবস্থাসংবলিত কন্ট্রোলরুম থাকার কথা বলা হলেও অ্যাপের কথা উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে ‘আমার বাইক’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফিন সানা চৌধুরী বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকে কীভাবে এই সেবা পরিচালনা করা যায়, সরকারের সঙ্গে এখন তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহারের কিছু সমস্যা আছে। এটা বিদ্যমান আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এই সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠান অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছি না। যদি যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও সুবিধাজনক হয়, আমরা তা বিবেচনা করব।’