‘সুস্থ শিশু, সুস্থ মা—মিডওয়াইফ ছাড়া হবে না’

বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরাছবি: প্রথম আলো

‘সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এক মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি শুনে ওই বাসায় দৌড়ে যাই। কিন্তু কম বয়স বলে আমাকে কেউ ঘরে ঢুকতে দিচ্ছিল না। অনেক অনুরোধের পর ঘরে ঢুকতে পেরে দেখি, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।’

এই অভিজ্ঞতা প্রজনন স্বাস্থ্য সহকারী বা মিডওয়াইফ সৈয়দা মাহফুজা আক্তারের। গ্রামে প্রতিবেশী ওই মায়ের বয়স অল্প ছিল। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তার রক্তক্ষরণ হয়েছিল। মিডওয়াইফ মাহফুজা হাত দিয়ে জরায়ু সংকোচন-প্রসারণ করে রক্ত পড়া কিছুটা কমিয়ে আনেন। তিনি গর্ভফুল বের করে এনে ওই মাকে হাসপাতালে পাঠান।

আজ রোববার বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক মাকে সেবা দিতে যাওয়ার এই অভিজ্ঞতা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন মিডওয়াইফ মাহফুজা। ‘সুস্থ শিশু, সুস্থ মা—মিডওয়াইফ ছাড়া হবে না’ শিরোনামে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিএমএস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে দেশের মিডওয়াইফরা মা ও সন্তানকে প্রাণে বাঁচালেও স্বীকৃতির জায়গা থেকে তাঁরা এখনো পিছিয়ে। অনেকে তাঁদের নার্সের সহকারী মনে করেন। অথচ তাঁরা স্বতন্ত্র পেশাজীবী। বয়স কম বলে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পরিবার তাঁদের কাছে সেবা নিতে আস্থা প্রকাশ করেন না। সব জায়গায় মিডওয়াইফদের আওয়াজ তুলে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়, যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়।

অনুষ্ঠানে মিডওয়াইফদের কাজে উৎসাহ দিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। তিনি বলেন, আগে ধাত্রীদের হাতে বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনা বেশি ছিল। ধাত্রীরা না বুঝেই অনেক কিছু করতেন। মিডওয়াইফরা প্রশিক্ষিত। তাঁদের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সুস্থ শিশু জন্ম নেয়। মা ও সন্তানের জীবন রক্ষায় মিডওয়াইফদের কাজের গুরুত্ব অনেক। বক্তব্য শেষে তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘মামুনিয়া’ গান গেয়ে মিডওয়াইফদের উৎসাহিত করেন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে বিএমএস কাজ করছে। তবে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে নার্সরাই শুধু ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে মিডওয়াইফরা কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করে। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর তিন বছরের ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে তাঁরা মিডওয়াইফ হিসেবে নিবন্ধিত হন। দেশে এখন নিবন্ধিত মিডওয়াইফের সংখ্যা ৭ হাজার ৪৮৯। এর মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মিডওয়াইফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে কাজ করছেন। অনুষ্ঠানে মিডওয়াইফ প্রতিনিধিরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকাদের মিডওয়াইফ সমমান দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক সংগীতা সাহা বলেন, মিডওয়াইফরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকারা মিডওয়াইফদের সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মানের নন। মিডওয়াইফদের সমমান দেওয়ার সুপারিশ করার জন্য গত বছরের ১১ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। আশা করা যায়, কর্তৃপক্ষ মিডওয়াইফদের শিক্ষাগত ও গুণগত মান বিবেচনায় রেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিএমএসের সহসভাপতি তামিম আক্তার, সংগঠনের পরামর্শক সাকিলা মতিন, নারীপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক নাজমুন নাহার এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফ উন্নয়ন প্রকল্পের অধ্যক্ষ জান্নাতুল ফেরদৌস। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএমএসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শারমিন শবনম।