২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগাতে হবে

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও সিএনজিচালিত বাসের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়, কিন্তু সব বাসেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিবহন মালিক সমিতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাসে স্টিকার লাগানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করবে বিআরটিএ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করবে বিআরটিএ।
গত রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে শুধু ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। সিএনজিচালিত বাসের জন্য বর্ধিত ভাড়া প্রযোজ্য নয় বলে জানিয়েছে সরকার। কিন্তু এই গ্যাসচালিত বাসের সংখ্যা কত, কোন পথে সেগুলো চলে বা এগুলো চিহ্নিত করার কোনো পথ বাতলে দেওয়া হয়নি। বিআরটিএ সিএনজিচালিত বাসের প্রকৃত সংখ্যা বা এগুলো কোন কোন পথে চলাচল করে তা স্পষ্ট করেনি। ফলে রাজধানী ঢাকায় এবং দূরপাল্লার পথে গ্যাসচালিত বাসেও বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বোঝার সুবিধার্থে সিএনজিচালিত বাস চিহ্নিত করতে স্টিকার লাগানোর জন্য পরিবহন মালিক সমিতিকে সোমবার চিঠি দেওয়া হয়।

বিভিন্ন স্থানে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া না মেনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ, ঢাকা জেলা প্রশাসন ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনে মহানগর পুলিশ এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়।

এসব বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিএর নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিনই পরিচালিত হবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু হবে বৃহস্পতিবার। তিনি জানান, গতকালের বৈঠকে তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে এক টাকাও বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের কিছু অভিযোগ তাঁরা পাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সিএনজিচালিত বাস চিহ্নিত করাও যাত্রীদের জন্য কষ্টকর। এ কারণে স্টিকার লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ স্টিকার না লাগালে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে বিআরটিএ দপ্তরে থাকা সিএনজিচালিত যানের তথ্য ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠক শেষে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় না করার জন্য পরিবহন মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে এই খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাজধানীর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল, ঢাকার ভেতরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চিঠি দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ চিঠিতে সই করেন। চিঠিতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বেড়েছে। সিএনজিচালিত কোনো বাসের ভাড়া বাড়েনি। ফলে সিএনজিচালিত বাসে কোনোভাবেই বর্ধিত ভাড়া নেওয়া যাবে না। অথচ কিছু স্থানের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবর আসছে। যা নিয়ম পরিপন্থী এবং আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এই পরিস্থিতি এড়াতে এবং সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে পরিবহন মালিকদের প্রয়োজনে রাস্তায় পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে পরিবহন মালিকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে, থাকবেন শ্রমিক নেতারাও। সেখানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
রোববার ভাড়া নির্ধারণের পর থেকেই নির্ধারিত হারে তা আদায়ে মালিক-শ্রমিকদের আহ্বান জানিয়ে আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এতে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রী বাড়তি ভাড়া আদায় এবং যাত্রীভোগান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের আরেকবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অন্যথায় দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এই আহ্বান জানান। তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে গতকাল থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। দেশব্যাপী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

মন্ত্রীর আহ্বানের পরও বাড়তি ভাড়া আদায় অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা এবং বড় বাসে ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাস্তবে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্তও আদায় করা হচ্ছে। দূরপাল্লার পথে সব বাসেই ডিজেলের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ ঢাকা-নরসিংদী, ঢাকা-মানিকগঞ্জ, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা-কুমিল্লাসহ কম দূরত্বের অনেক পথেই সিএনজিচালিত বাস চলাচল করে বলে বিআরটিএ সূত্র জানায়। এগুলোতে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে।