দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো ঘটনারই বিচার হয় না। সব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিহত কর’ শীর্ষক সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করতে, দেশের অগ্রগতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কারা দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, এসব ঘটনায় কারা দায়ী—নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
সহিংসতার ঘটনার পর বিবৃতি, মিছিল, মানববন্ধন আর সমাবেশ করে তাঁদের আস্থা ফেরানো যাবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির হয়তো মেরামত করে দেওয়া যাবে, যাঁদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেটিও নতুন করে তৈরি করে দেওয়া যাবে। যিনি আহত হয়েছেন তাঁর চিকিৎসা করে হয়তো সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু তাঁদের মনোজগতে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে—সেটি রাষ্ট্রকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেওয়া না হলে, বিচারের আওতায় আনতে না পারলে তাঁদের ভীতি দূর হবে না।
বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব যে প্রশাসনের ওপর, তারা যদি সেটি করতে না পারে, তবে তাদের আন্তরিক বলতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশাসন বলতে পারি না।’
তাঁদের মনোজগতে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে—সেটি রাষ্ট্রকেই ফিরিয়ে দিতে হবে।
ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, যারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত, তারা মানুষের শত্রু, তারা অশুভ শক্তি। তাদের ছাড় দিলে তারা অশুভ শক্তির সহায়ক হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সহিংসতায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাও ছিল অনন্য। তবে সরকারকে আরও তৎপর হওয়া দরকার ছিল। এসব ঘটনার নেপথ্যে কারা, সরকারকে তা খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তি স্থিতিশীল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা বলেন, ‘এসব ঘটনায় কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমি গ্রেপ্তারে বিশ্বাস করি না। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য্য, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ প্রমুখ।