সাংবাদিকতার নামে কী হচ্ছে, দেখেন না: দুদক আইনজীবীকে হাইকোর্ট
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টেলিভিশন নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দুদকের আইনজীবীকে সাংবাদিকতার নামে কী হচ্ছে, তা দেখতে বলেছেন হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কশিনের (দুদক) এক উপসহকারী পরিচালকের বদলি স্থগিতের কোনো আদেশ না দেওয়া সত্ত্বেও হাইকোর্ট ওই বদলির আদেশ স্থগিত করেছেন বলে খবর প্রকাশের পর রিজয়েন্ডার ছাপানো নিয়ে শুনানিতে আদালত এ কথা বলেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এই শুনানি গ্রহণ করেন। আদালত বৃহস্পতিবার সার্বিক বিষয়ে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
শুনানির একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকতার নামে কী হচ্ছে, দেখেন না। কী এক জাহাঙ্গীর বেরিয়েছে আইপিটিভি, কত চ্যানেল, কত নিউজ, কত টিভি…সুতরাং।’
আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্যপদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ছয়টি মামলা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা আইপিটিভির নামে স্যাটেলাইট টিভি পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন তিনি। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টেলিভিশনে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিয়ে আসতেন। নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণার জন্য সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাজির করতেন তিনি।
‘দুদক কর্মকর্তা শরীফের বদলি আদেশ স্থগিত’ নিয়ে পূর্বকোণ ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে আসা খবর সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাকিবুল হাসান। আইনজীবী মাজহারুল হকের স্বাক্ষরিত হাইকোর্টের আদেশের কপি থেকে ওই তথ্য জানা গেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে ওই বদলির আদেশ বাতিল ও ‘রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি’ বিষয়ে যাতে শরীফ প্রতিবেদন দিতে পারেন—সে বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে করা আবেদন নিষ্পত্তি চেয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নামের একটি সংগঠনের চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতির করা রিট গতকাল শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে আদালত দুদক আইনজীবীকে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমে রিজয়েন্ডার দিতে বলেন।
এর ধারাবাহিকতায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, সোমবার আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার ‘মিস রিপোর্টিং’ নিয়ে। আরও কয়েকটি পত্রিকায় একই বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে বলে পূর্বকোণ পত্রিকার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক জানিয়েছেন। পত্রিকাটির প্রথম পাতায় বক্স আকারে রিজয়েন্ডার ছাপা হয়েছে।
খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশে আদালত বলেন, অন্য পত্রিকায় যদি এসে থাকে, তাহলে যেসব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সবাই যাতে রিজয়েন্ডার দেয়। যে আইনজীবী (আইনজীবী মাজহারুল হক) সার্টিফিকেট দিয়েছেন তার কপি সংগ্রহ করবেন।
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘সংগ্রহ করেছি, জাল মনে হচ্ছে। কেননা বিচারপতির নামের বানানও ভুল লিখেছে। এ সময় আদালত বলেন, যদি জাল হয়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভার রিট আবেদনকারীকে নিতে হবে। বিষয়টি আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন আসবে। এর মধ্যে আপনি এসব সংগ্রহ করেন। আরও যদি কোনো তথ্য থাকে, তাহলে দেবেন। কারণ, এটা ধরে নিতে হবে যে পিটিশনার বা তাঁর আইনজীবী এটি করেছেন।’
পত্রিকার খবর নজরে আনা আইনজীবী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, পত্রিকার কপিসহ তথ্যাদি ইতিমধ্যে দুদকের আইনজীবীকে পাঠানো হয়েছে। দৈনিক পূর্বকোণ ছাড়া মহানগর চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার নিউজ নামে দুটি পত্রিকার নিউজের কপি পেয়েছেন বলে জানান খুরশীদ আলম খান।
আদালত বলেন, ‘আপনি সবগুলোতে যোগাযোগ করেন। ভিত্তিহীন রিপোর্ট, আপনারা ব্যবস্থা নেবেন।’
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুদককে জানিয়েছি, কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো—যদি এই নিউজ বা রিটের পেছনে দুদকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ইন্ধন থাকে, দুদক তাঁর নিজস্ব ইনটেলিজেন্সির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এরপরও আদালত যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী দুদক পদক্ষেপ নেবে।’
এই সময় আদালত বলেন, ‘সামগ্রিক বিষয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ দেব। এর মধ্যে ওই আইনজীবীর (মাজহারুল হক) সার্টিফায়েড কপিটি পাঠিয়ে দেবেন।’