আলোচনায় বক্তারা
সাংবাদিকতাকে নারীর পেশা মনে করা হয় না
নারী সাংবাদিকদের এগিয়ে চলার পথে বাধা দূর করতে ভালো সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন আলোচকেরা।
সাংবাদিকতায় দেশের নারীদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এখনো দেশে সাংবাদিকতাকে নারীদের পেশা মনে করা হয় না। তারপরও যেসব নারী এ পেশায় রয়েছেন, তাঁরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। হুমকি, মামলা ও সাইবার বুলিংয়ের পাশাপাশি নারী সাংবাদিকদের চরিত্র হননের চেষ্টা চলে। তবে ভালো সাংবাদিকতার চর্চা সব বাধা পেরোতে সাহায্য করবে। গতকাল শনিবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিকেরা এসব কথা বলেন।
‘এখনো দেশে সাংবাদিকতাকে নারীদের পেশা মনে করা হচ্ছে না।’
রাজধানীর পান্থপথে দৃক গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতা: ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে কথা বলেন। দৃক পিকচার লাইব্রেরি আয়োজিত প্রদর্শনীটি শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মালেকা বেগম বলেন, ‘সেলিনা আপার কাছ থেকে আমি শিখেছি। যাঁরা সেলিনা আপাকে একবার দেখেছেন এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের পক্ষে তাঁকে ভোলা সম্ভব না।’ এ সময় তিনি সেলিনা পারভীন দিবস পালনের দাবি জানান।
বাংলাদেশ স্বাধীনের আগ মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এদেশকে মেধাহীন করতে রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানি সেনারা অনেক মেধাবী সন্তানকে হত্যা করে। তাঁদেরই একজন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন। তিনি ১৯৬৯ সালে বের করেছিলেন শিলালিপি নামে একটি পত্রিকা। নিজেই সেটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন৷ দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর লেখা নিয়ে প্রকাশিত শিলালিপি সে সময় সবার নজর কেড়েছিল।
রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে যেসব বুদ্ধিজীবীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সেলিনা পারভীন একমাত্র নারী ছিলেন বলে জানান বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপ্রধান নাসিমুন আরা হক। তিনি বলেন, ‘এখনো দেশে সাংবাদিকতাকে নারীদের পেশা মনে করা হচ্ছে না।’
সেলিনা পারভীনের ভাই শাহাবুদ্দিন শেলী বলেন, তাঁদের পরিবারে পিএইচডি ডিগ্রিধারী আছেন। কিন্তু পরিবারে সবচেয়ে শিক্ষিত ছিলেন সেলিনা। যদিও তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, তিনি ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারতেন।
‘সেলিনা আপার কাছ থেকে আমি শিখেছি। যাঁরা সেলিনা আপাকে একবার দেখেছেন এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের পক্ষে তাঁকে ভোলা সম্ভব না।’
ভালো সাংবাদিকতা নারী সাংবাদিকদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। তিনি বলেন, নারী সাংবাদিকদের শক্তভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পিরোজপুরের সাংবাদিক শিরিনা আফরোজ বলেন, কাজ করতে গিয়ে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন তিনি। তাতে ব্যর্থ হয়ে দুর্বৃত্তরা তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তারপরও তিনি থেমে যাননি।
সিলেটের বিলকিস সুমি বলেন, জেএমবির সর্বোচ্চ নেতা শায়খ আবদুর রহমানকে সিলেটের আদালতে আনলে তিনি ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। তখন একজন তাঁকে বলছিলেন, ‘এই বেয়াদবের বাচ্চা, মাথায় কাপড় দে।’
নারীর চরিত্র হননের চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও দৃকের পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ।