‘সরকার শ্রমিকদের মানুষই মনে করে না’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা তাজরীন ফ্যাশন ও এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিকেরা তাঁদের ‘পিটিয়ে’ উঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। তাঁরা দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়ে বলেছেন, আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসা শিক্ষক ও শ্রমিকদের আজ সোমবার ভোররাত সাড়ে তিনটা থেকে চারটার দিকে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ঘুমন্ত শিক্ষক ও শ্রমিকদের লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এ ঘটনায় তাজরীন ও এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিকেরা বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাজরীনের শ্রমিকেরা তিন দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এবং এ ওয়ানের শ্রমিকেরা দুই দফা দাবিতে ১ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন।
তাজরীনের শ্রমিকেরা বলছেন, ৮০ দিন ধরে তাঁরা তিন দফা দাবি নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের নজরে আনার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিজিএমইএ এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকেরা বলেন, ‘আপনারা সবাই দেখলেন, এ দেশের সরকার শ্রমিকদের মানুষই মনে করে না। এমনকি শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের তাজরীনের শ্রমিকদের যখন দেখা হয়, তখন তিনি আমাদের বলেছিলেন, বিজিএমইএর কাছ থেকে আমাদের তাজরীনের শ্রমিক পরিচয়ের প্রত্যয়নপত্রপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন কিছু অনুদান আমাদের দেওয়া যেতে পারে। শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে পত্রিকার খবর মারফত আমরা জানতে পারি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরও আমাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ইতিবাচক প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল। কিন্তু বিজিএমইএর কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র আদায় করার কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি। আমাদের নিয়ে সরকার, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ক্যারম বোর্ডের ঘুঁটি বানিয়ে খেলছে।’
অন্যদিকে এ ওয়ানের শ্রমিকেরা বলছেন, বেপজা এবং ব্যাংকের আইনি জটিলতার কারণে তাঁরা ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে অভিযোগ করে শ্রমিকেরা বলছেন, শ্রমিকদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করাসহ, নারী শ্রমিকদের শ্লীলতাহানি এবং গালিগালাজ করা হয়েছে। শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, হামলায় তাজরীনের আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্যে ১৮ জনকে আহত অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এ ছাড়া এ ওয়ানের ২৫ জন শ্রমিক হামলায় আহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকেরা প্রশ্ন রাখেন, ‘পুলিশ আমাদের গত পরশু বলেছিল দেশের পরিস্থিতি নাকি ভালো না, এ জন্য অরাজকতা ঠেকাতে আমাদের জোর করে উঠিয়ে দেওয়া হবে। এই যে তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের আজ আট বছর পরও আমাদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলো না, এর চেয়ে বড় অরাজকতা আর কী হতে পারে? এ ওয়ানের শ্রমিকেরা ১১ মাস ধরে বেতন পাই না, এর চেয়ে বড় অরাজকতা কী হতে পারে? ভোররাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অতর্কিত হামলা করে সবচেয়ে বড় অরাজকতার রাজত্ব তো পুলিশ তথা সরকারই কায়েম করল।’
হামলার ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না বলে জানান শ্রমিকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবুর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিক আশরাফ আলী। আরও বক্তব্য দেন তাজরীন গার্মেন্টসের শ্রমিক জরিনা বেগম, গার্মেন্টস টিউউসির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ প্রমুখ।