সত্যের শত্রু আছে, মোকাবিলা করেই সাংবাদিকতা করতে হবে: আরেফিন সিদ্দিক

‘সাংবাদিকতায় শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

সত্যের শত্রু আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সৎ সাংবাদিকদের শত্রু থাকবেই। সে শত্রুকে মোকাবিলা করে সাংবাদিকতা করে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

‘সাংবাদিকতায় শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আরেফিন সিদ্দিক। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সাবেক মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর স্মরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ২০১৯ সালের এই দিনে মারা যান তিনি।

সাংবাদিকতা নানা সমস্যাসায় জর্জরিত উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সমস্যাগুলোর কি সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে উত্তরণ ঘটবে? সরকার আইন করে দিবে, তারপর সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়ন ঘটবে? সেটা আমার মনে হয় না। সাংবাদিক নেতারা, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংস্থা আছে, তাদের এখানে এগিয়ে আসার প্রয়োজন আছে। আমরা চাই না সাংবাদিকতা কোনো জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হোক—সেটা সরকার থেকে নিয়ন্ত্রিত হোক বা সংবাদশিল্পের মালিকদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রিত হোক।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে এ অধ্যাপক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের এ আইন যেন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। সাংবিধানিক অধিকার যাতে বাধাগ্রস্ত না করে। এর অপব্যবহার রোধে সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।

এ সময় সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সংবাদ প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ব্যক্তিত্ব না থাকলে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে। কখনো কখনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তির গুরুত্ব রয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, দীর্ঘ সময় ‘বন্দী’ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আন্দোলন করে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু তা আবার চলে গেছে। কোনো সংবাদ, শিরোনাম ইচ্ছেমতো করা যায় না। মালিকের নির্দেশনা ছাড়া, তাদের ব্যবসায়ী স্বার্থ, মালিকের নিজের স্বার্থ, আত্মীয়ের স্বার্থের বাইরে কিছু লেখা যায় না। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও সাংবাদিকদের সব সুযোগ–সুবিধা নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, সাংবাদিকেরা সাংবাদিকতা এসে শিখবেন এর চেয়ে শিক্ষা অর্জন করে এ পেশায় আসাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা কাটাতে হবে। আর শাহ আলমগীর সরকারের সমালোচনা না করেও সত্য বলার চেষ্টা করেছেন—সাংবাদিকতার বড় নীতি এটি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকেরা এখন সাংবাদিক হতে চান কি না—এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে ভালো সাংবাদিক হতে চান, সে সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে।

বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ বর্তমানে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নয়, বরং নৈতিকতা। সাংবাদিকতায় নৈতিকতা রক্ষায় সৎ সাংবাদিকদের বড় পদে বসাতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, শাহ আলমগীর নির্ভুল সাংবাদিকতার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন ভালো সাংবাদিক তৈরির।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মেধা উন্নয়নের, নানা মহলের চাপের, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাপের। এগুলো বাদ দিয়ে গণমাধ্যম কীভাবে বিশ্বাসের জায়গায় যাবে, সেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহ আলমগীরের স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম, বোন তাহমিনা চৌধুরীসহ অনেকে।