মাঠ রক্ষার দাবি উপেক্ষা করে রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আগের মতো পুলিশি প্রহরায় এ নির্মাণকাজ চলছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৯ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের অন্তত ১২ জন সদস্য রয়েছেন।
নির্মাণকাজ চলাকালে মাঠের ভেতরে চার শিশুকে বসে থাকতে দেখা যায়। নির্মাণশ্রমিকদের উদ্দেশে এ শিশুদের বলতে শোনা যায়, ‘আংকেল, কাজ বন্ধ করেন।’
শিশুরা জানায়, তারা আগে এ মাঠে খেলত। কিন্তু পুলিশ নিষেধ করার পর থেকে আর খেলছে না।
মাঝেমধ্যে এলাকার কিছু অধিবাসীও মাঠের কাছে আসতে দেখা যায়। তবে তাঁদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে আবার চলে যেতে দেখা যায়।
নির্মাণকাজে যুক্ত মো. বুলবুল নামের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে তাঁরা কাজে আসেন। ইতিমধ্যে তাঁরা পিলারের রড দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। আজ থেকে তাঁরা পিলার ঢালাইয়ের কাজ শুরু করবেন।
মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা রাজি হননি। তাঁরা কলাবাগান থানায় গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তেঁতুলিয়া মাঠের পাশের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, টানা তিন দিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে। মাঠে পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত থাকছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করেন। তার আগেও তিনি মাঠে কিছু পুলিশ সদস্যদের দেখেছেন।
এলাকাবাসীর একজন আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, এটি এ এলাকার একমাত্র মাঠ। শিশুদের খেলাধুলাসহ নানা কারণে মাঠটি থাকা দরকার। জায়গার এত অভাব পড়ল যে এখন এলাকার একমাত্র মাঠ দখল করে থানা ভবন বানাতে হবে! এখানে জোর করে থানা ভবন করে পুলিশ ও এলাকাবাসীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।
তেঁতুলতলা মাঠটি স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের একটি গলিতে। এটি মূলত একটি খালি জায়গা, যা পুলিশ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণ করছে। ছোট এই মাঠে এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। এ মাঠে ঈদের নামাজ, স্থানীয় কেউ মারা গেলে তাঁর জানাজা ও সামাজিক অনুষ্ঠান হয়।
মাঠটি রক্ষার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছিল। এরই মধ্যে গত রোববার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না মাঠে নির্মাণকাজের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করায় তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে এদিন বেলা ১১টার দিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের কলাবাগান থানায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আন্দোলন না করার মুচলেকা নেওয়া হয় তাঁদের কাছ থেকে।
মাঠ রক্ষার দাবি জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকেরা দুটি আলাদা বিবৃতি দিয়েছেন।
তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের জন্য বিকল্প জায়গায় খুঁজতে সবাইকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও থানা ভবন করাটা অতীব জরুরি। কারণ, থানা এখন ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাঁরা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করা যায়।