করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়েই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে বহুগুণ। অনলাইনে ক্লাস করাসহ বিভিন্নভাবে শিশুরা ইন্টারনেটের জগতে অবাধে বিচরণ করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল এ জগতে শিশুদের অবাধ বিচরণ কতটা নিরাপদ, সে সম্পর্কে ভাবতে হবে। শিশুর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে আগে বদলাতে হবে বাবা-মাকে। তথাপ্রযুক্তি, তথা ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য মা–বাবা সচেতন হলে সেটি শিশুর নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজে দেবে। তা না হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হতে পারে।
‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার রাতে ‘শিশুর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট’ শীর্ষক এ ওয়েবিনার আয়োজন করে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসবিষয়ক জাতীয় কমিটি-২০২১ (এনসিক্যাম)।
এনসিক্যামের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইসের পৃষ্ঠপোষকতায় মাসব্যাপী সচেতনতামূলক এ কর্মসূচি চলছে।
ওয়েবিনারে যুক্তরাজ্য সরকারের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কর্মরত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মেহতাব গাজী রহমান বলেন, ইন্টারনেটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে ভীষণ প্রভাব ফেলে। শিশুরা আগে যে সময়ে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে কাটাত, সেই সময় এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাচ্ছে।
শিশুর ওপর ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি না, সেটি বুঝতে মোটাদাগে চারটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ। সেগুলো হলো সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, শিশু ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না, তার খাদ্যাভ্যাসে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না ও তার সামাজিক আচরণ স্বাভাবিক আছে কি না। এসব ঠিক রাখতে হলে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে, সন্তানকে সময় দিতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান বলেন, শিশুরা ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না। তাই তারা সহজেই সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। শিশুদের ইন্টারনেটের জগতে নিরাপদ রাখতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার (প্রাইভেসি) খুঁটিনাটি বিষয়ে তাদের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
যেমন পাসওয়ার্ড, লোকেশন, বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর—এগুলো কোনোভাবেই শেয়ার করা যাবে না। এ ছাড়া শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদের ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ চর্চার পরামর্শ দেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সিসিএ কার্যালয়ের সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা বিভাগের উপনিয়ন্ত্রক (উপসচিব) হাসিনা বেগম বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেতনতার বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে ৮২ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবককেও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির শুরুতে কিছুদিন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। সে সময় ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে তরুণীরা হয়রানির শিকার হয়েছেন বেশি। তখন ওয়েবিনার আয়োজন করে আবার কর্মসূচি শুরু করা হয়। কন্যাকথা (konnakothacca.com) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারা দেশে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে বলেও জানান তিনি।
ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে ক্যামের জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বলেন, শিশুর জন্য সাইবার–জগৎকে নিরাপদ করতে অভিভাবকদের আগে সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে হবে। তবেই দেশে সুস্থ সাইবার–সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন ক্যামের জাতীয় কমিটির সদস্য কাজী মুস্তাফিজ।