‘শব্দ করে পড়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উচ্চারণ ও শব্দ করে পড়তে হয়। শিক্ষকেরা শুনে কোনো ভুল থাকলে তা শুধরে দেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শব্দ করে পড়ার ঐতিহ্য ছিল। তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এই চিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অনেক বড় কর্মকর্তা যখন কথা বলেন তখন তাঁরা যে ভুল বলছেন, তা বোঝা যায়। ছোটবেলায় শেখা ভুলটা থেকেই যায়। উচ্চারণ শেখার জন্য শব্দ করে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। সন্তান বাসায় শব্দ করে পড়ছে কি না, সে বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ওয়ার্ল্ড রিড অ্যালাউড ডে বা শব্দ করে পড়া দিবস উপলক্ষে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এসব কথা বলেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে বিশ্বের ১৭৮টি দেশ দিবসটি পালন করে। বেশির ভাগ দেশ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বুধবার দিবসটি পালন করে। বাংলাদেশে এবার দ্বিতীয়বারের মতো (গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ ছিল) দিবসটি পালন করছে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। ‘শব্দ করে পড়ি, নিজেকে আবিষ্কার করি’ স্লোগানের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে দেশে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওমর ফারুক বলেন, শব্দ করে পড়া একটি ফলপ্রসূ শিখনপদ্ধতি। কোনো কিছু ভালো করে শিখতে চাইলে শব্দ করে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও আলাদা কার্যক্রম হাতে নিতে পারবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান দুই মেয়ের অভিভাবক হিসেবে বলেন, ‘গ্রামে আমরা বাড়িতে সবাই শব্দ করে পড়তাম। কেউ ভুল উচ্চারণ করলে তা অন্যজন ঠিক করে দিতাম। আমার দুই মেয়ে কখনোই শব্দ করে পড়ে না। শব্দ করে পড়ার এ আন্দোলন পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে দিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে রিড অ্যালাউড বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রূপক সিংহ বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন শব্দ করে না পড়লে শিক্ষক, মা-বাবা শাস্তি দিতেন। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের সেভাবে শব্দ করে পড়ার জন্য অভিভাবকদের পক্ষ থেকে খুব একটা উৎসাহ দেওয়া হয় না। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, শিশুর সামাজিক বিকাশে শব্দ করে পড়ার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেকোনো পরিবেশে নিজেকে তুলে ধরতে বা উপস্থাপন করতে হয়।’
দিবসটি উপলক্ষে অনলাইনে শিশুশিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শব্দ করে পড়া, গল্প, কবিতা ও গানের ভিডিও নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।