লেকপাড় দখল করে নার্সারি
মহাখালী ও গুলশান–১–এর সংযোগ সেতুতে লেকের জায়গা দখল করে চলছে নার্সারির ব্যবসা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক মালি এই ব্যবসা চালাচ্ছেন। নার্সারির আড়ালে ময়লা–আবর্জনা ফেলে লেকের পানি দূষিত করা হচ্ছে। নিয়মিত বর্জ্য ফেলায় লেকের পাড়ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
রাজউকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, লেকপাড়ের জায়গা দখল করে নার্সারির ব্যবসা করা ওই মালির নাম ইদ্রিস আলী। তবে নার্সারিতে তাঁকে সবাই খোকন বলেই চেনে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী অংশ থেকে লেকের সংযোগ সেতু হয়ে গুলশান অংশ পর্যন্ত লেকপাড়ের বড় এলাকাজুড়ে ওই নার্সারির বিস্তার। নার্সারির মালিক গাছপালার আড়ালে একটি ঘরও তুলেছেন। টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো ঘরের মেঝেটি পাকা করা। ভেতরে চেয়ার–টেবিল পেতে পুরোদুস্তর কার্যালয় বানানো হয়েছে। নার্সারির ব্যবস্থাপক ওই ঘরে বসেন। আর ক্রেতাদের জন্য বাহারি নকশার টব, ফুল ও ফলগাছের বীজ ও গাছ পরিচর্যার বিভিন্ন রাসায়নিক সার বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে।
এ ছাড়া ক্রেতাদের হাঁটার জন্য নার্সারির ভেতরে দুটি পাকা রাস্তা করা হয়েছে। ওই ঘরের পেছনে আছে পানির সংযোগ। মূল কার্যালয় ছাড়াও ফুলগাছের পরিচর্যার জন্য সেখানে আরও কয়েকটি ঘর বানানো হয়েছে। নার্সারি থেকে লেকের পানিতে নিয়মিত ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়।
গুলশানের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নার্সারির আড়ালে লেকপাড়ে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়। এতে একদিকে লেকের দূষণ হয়, অন্যদিকে লেকের পাড় ভরাট হতে থাকে।
গুলশান ১–এর বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ‘লেকের পাড় দিয়ে যখন হাঁটি তখন নার্সারির গাছপালার কারণে লেকের পানি দেখতে পারি না। দৃষ্টির আড়ালে থাকায় লেকে ময়লা ফেলে দখল করা হচ্ছে। নার্সারিটি অপসারণ করে দ্রুত লেকপাড় দখলমুক্ত করা উচিত।’
সম্প্রতি গুলশান–বনানী–বারিধারা–নিকেতন লেকের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য গুলশান সোসাইটির সঙ্গে একটি চুক্তি করে রাজউক। গুলশান সোসাইটির লেক উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ইভা রহমান বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে নার্সারির মালিককে লেকপাড়ের জায়গা খালি করতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি সে কথা শোনেননি। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সরাসরি কোনো সহায়তা করে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, লেক খনন ও সংস্কার করা হয়েছে। লেকের পাড়ে কোনো অবৈধ দখল থাকতে পারবে না। লেকের ওই অংশে যে স্থাপনাই থাকুক না কেন, সেগুলো আগামীকালের (আজ) মধ্যেই সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
রাজউকের মালি ইদ্রিস আলী বলেন, অনেক দিন আগে থেকে নিজের কাজের পাশাপাশি তিনি ওই নার্সারি তৈরি করেছেন। নার্সারির বিষয়ে রাজউকের সব বড় কর্তাই কমবেশি জানেন। তিনি মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেখানে নার্সারি করেছেন। নার্সারিতে থাকা ঘরগুলো ভেঙে ফেলবেন বলেও তিনি জানান।