রাসেল ও ইব্রাহিমকে কি কেউ চেনেন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ২০৪ নম্বর ওয়ার্ড। চারদিকে শুধু রোগীদের ভিড়। একটি শয্যাও খালি নেই, মেঝেতে পা ফেলারও জো নেই। সেই মেঝেতেই স্থান হয়েছে দুই শিশু—রাসেল ও ইব্রাহিমের। এই দুজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো মেলেনি তাদের মা–বাবা বা কোনো আত্মীয়স্বজনের খোঁজ।
শিশু দুটির সঙ্গে আজ শুক্রবার কথা বলে জানা গেল তাদের হাসপাতালে আসার বৃত্তান্ত। রাজধানীর কমলাপুরে রাসেলকে ধাক্কা দেয় চলন্ত ট্রেন। পায়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে গত ২১ আগস্ট এ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। তার বয়স ১২ বছর। আর বিমানবন্দর এলাকার পদচারী–সেতু থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পায় সাত বছর বয়সী ইব্রাহিম। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ১০ আগস্ট। হাসপাতালে দুজনকে একসঙ্গেই রাখা হয়েছে।
রাসেল জানাল, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার সাতোরা এলাকায়। তার বাবার নাম কালাম ও মায়ের নাম কাজু বেগম। রাসেল কুমিল্লায় একটি মাদ্রাসায় পড়ত। সেখান থেকে সে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। তখন থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রাসেলের এক কথা, ‘আমি বাড়ি যাইতে চাই।’ সে জানাল, তার আরও চার ভাইবোন আছে। কিন্তু এরপরও রাসেলের স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ওদিকে ইব্রাহিম কথা বলে কম। নিজের নাম, জেলা, বাবা ও ভাইয়ের নাম ছাড়া আর কোনো তথ্য সে দিতে পারছে না। তার বাড়ি বরিশালে। বাবার নাম কামাল ও ভাইয়ের নাম ফয়সাল। অবশ্য ইব্রাহিম মা–বাবার কাছে ফিরতে রাজি নয়। না যেতে চাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে হাবেভাবে বোঝায়, মা–বাবা তাকে মারেন।
আশার কথা হলো, রাসেল ও ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকার এক গৃহিণী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই গৃহিণী মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘আমি তেমন কিছুই করিনি, ভাই। বাচ্চা দুটির অবস্থা দেখে মায়া লাগল, তাই চেষ্টা করছি ওদের জন্য কিছু করার।’ হাসপাতালে মো. শহীদ নামের একজন সরাসরি শিশু দুটির দেখাশোনা করছেন। তাঁর অসুস্থ স্ত্রী একই ওয়ার্ডে ভর্তি। শহীদ বললেন, ‘আসতে–যেতে এই বাচ্চা দুইটাকে দেখি। মায়া লাগে, তাই দায়িত্ব নিছি। টাকাপয়সার জন্য না ভাই, মন থেকেই বাচ্চা দুইটার দেখাশোনা করি।’ শিশু দুটির চিকিৎসা বিষয়ে শহীদ বলেন, ‘অনেকে বলতাছে, ওদের কাছের কাউরে না পেলে ওদের কোনো পুনর্বাসন কেন্দ্রে দিয়ে দেওয়া উচিত।’
ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স খালেদা হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদের যে অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে ওরা এখন একটু ভালো আছে। তাদের এখন মা–বাবার যত্ন প্রয়োজন। নিবিড় যত্ন এখানে পাওয়া কঠিন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুকৃতি দাসের অধীনে আছে রাসেল। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তো বাসায়, হাসপাতালে না গিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ অন্যদিকে ইব্রাহিমকে দেখছেন একই বিভাগের প্রধান অসিত চন্দ্র সরকার। তবে তাঁকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।