রাতে ঢাকার বায়ু ‘দুর্যোগপূর্ণ’ অবস্থায় চলে যায়

ঢাকা-ডেমরা সড়ক দিনভর ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এ পথে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা পড়েন বিপাকে। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকায়
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সাধারণত ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হয় শীতকালে। এ সময় বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ইটভাটাগুলো চালু থাকে, নির্মাণকাজও বেড়ে যায়। কম তাপমাত্রা এবং বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকলে সেখানে এসব উৎস থেকে আসা দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকণাগুলো সহজে ভেসে বেড়াতে পারে। কিন্তু এবার শীত প্রায় বিদায় নিলেও রাজধানীর বায়ুর মানের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। দিনে যা–ও কিছুটা উন্নতি হয়, সন্ধ্যা নামতেই বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা থেকে বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের ১ নম্বর স্থানে ছিল।

বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব বলছে, দুই সপ্তাহ ধরে বায়ুদূষণের দিক থেকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বায়ুর মান থাকে অস্বাস্থ্যকর। বিকেল থেকে তা খুবই অস্থাস্থ্যকর হতে থাকে, রাতে তা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। দিনের বেশির ভাগ সময় বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান খারাপের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান থাকে শীর্ষ ৫ থেকে ১৫-এর মধ্যে। বিকেলের মধ্যে ঢাকা শীর্ষ তিনে চলে আসে। আর রাত আটটার পর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই দূষিত বায়ুর দিক থেকে ঢাকা শীর্ষতম স্থানে বা ১ নম্বরে চলে আসে।

ঢাকা-ডেমরা সড়ক দিনভর ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এ পথে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা পড়েন বিপাকে। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আবহাওয়াবিদ ও বায়ুর মান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর আকাশ থেকে মেঘের দল সরে গেছে। ফলে মেঘে বাধা না পাওয়ায় রোদের তেজ বেড়ে যাচ্ছে। আর ওই তাপে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে তা শুষ্ক হয়ে উঠছে। জলীয়বাষ্প কম থাকায় দিনে বাতাসে দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকণা ভাসতে পারে না। ফলে দিনে বায়ুর মানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তবে সন্ধ্যা নামতেই তাপমাত্রা কমে, বাতাসে জলীয়বাষ্প বাড়ে। আর তাতে রাজধানীর নির্মাণকাজের ধুলা, ইটভাটার ধোঁয়া আর শিল্পকারখানার দূষিত বায়ু থেকে সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২ দশমিক ৫ ও পিএম-১০ যোগ হয়। বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্পে তা ভেসে বেড়ানোর সুযোগ বেশি পায়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে চালু হওয়া ইটভাটাগুলোর ধোঁয়া এত দিন ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হতো। সম্প্রতি তাতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হচ্ছে। ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে নির্মাণকাজ থেকে আসা ধুলা আর পরিবহনের ধোঁয়া। যেগুলোর তৎপরতা সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে ওই সময়ে দূষণ বেশি থাকে।

ঢাকা-ডেমরা সড়ক দিনভর ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এ পথে চলাচল করা যানবাহন ও পথচারীরা পড়েন বিপাকে। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দিনে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। রাতে তা ২০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। ওই কম তাপমাত্রা বাতাসে দূষিত বস্তুকণাগুলো ভেসে থাকার জন্য অনুকূল হয়ে ওঠে। ভোরে থাকে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম। ১৫ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে আসে তাপমাত্রা। আর ওই সময় যানবাহন আসার পরিমাণও বেশি থাকে।

বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকগুলো ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে। সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এসে সেগুলো জড়ো হলেও তা শহরের বড় অংশ অতিক্রম করে আসে। ফলে পুরো শহরে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে।

এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান যখন ১ নম্বরে ছিল, তখন বায়ু মানের সূচক ছিল প্রায় ২০০, অর্থাৎ খুব খারাপ। ঢাকার পরে ছিল যথাক্রমে রাশিয়ার ক্রাসনয়াস্ক ও কলকাতা শহর।

এ ব্যাপারে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামুরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল। বিশেষ করে দূরপাল্লার গাড়িগুলো ধোঁয়া এবং বড় অবকাঠামোগুলোর ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো এবং কালো ধোঁয়াযুক্ত গাড়িগুলোকে শহরে প্রবেশ করতে না দেওয়া উচিত। এগুলো করলে দূষণ অনেক কমে আসত।