রমনার বটমূলে আবার তৈরি হচ্ছে ছায়ানটের মঞ্চ

এবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে যন্ত্রবাদন দিয়ে। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে থাকবে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগ মঙ্গললোকে’।

ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। গতকাল বিকেলে রমনার বটমূলে
ছবি: দীপু মালাকার

রমনার বটমূলে দুই বছর পর আবার চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। এ মঞ্চ থেকে পয়লা বৈশাখে গান-পাঠ-আবৃত্তিতে স্বাগত জানানো হবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৯–কে।

গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এখানে এ অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে।

ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে মঞ্চের মহড়া এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে মাসখানেক ধরে নিয়মিত মহড়া চলছে। গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠানসূচি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আয়োজনে প্রায় দেড় শ শিল্পী অংশ নেন, এবার সংখ্যা কমিয়ে ৮৫ জন করা হয়েছে।
শিল্পী লাইসা আহমদ, ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক

এখন সংক্রমণের তীব্রতা কমে জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে থাকায় আবার বটতলায় এই ঐতিহ্যবাহী সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এর আগে গত ২ এপ্রিল ছায়ানট সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানায়। তখন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুন জানিয়েছিলেন, দুঃসময় অতিক্রম করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আনন্দ নিয়ে এবার নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। নতুন কর্মপ্রেরণায় জেগে ওঠার গান থাকবে অনুষ্ঠানে।

গতকাল সোমবার বটমূলে দেখা গেল, রমনার পশ্চিম পাশের লেকের ধারের বিখ্যাত বটমূল ঘিরে মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন কর্মীরা। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে আরও দুই দিন আগে। হাতে সময় কম, তাই কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বরাবর পয়লা বৈশাখের আগের দিনেই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে বসে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ায় অংশ নেন। এবার মঞ্চে এমন মহড়া হচ্ছে না।

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মঞ্চের মহড়া এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে মাসখানেক ধরে নিয়মিত মহড়া চলছে। গান, আবৃত্তি, পাঠ নিয়ে অনুষ্ঠানসূচি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আয়োজনে প্রায় দেড় শ শিল্পী অংশ নেন, এবার সংখ্যা কমিয়ে ৮৫ জন করা হয়েছে।

শিল্পী লাইসা আহমদ জানান, এবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে যন্ত্রবাদন দিয়ে। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে থাকবে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগ মঙ্গললোকে’। অনুষ্ঠানে পঞ্চকবির গান ছাড়াও থাকবে লোকগান, ব্রতচারীদের একটি গান ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’। লোকগানের মধ্যে থাকবে ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’।

ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তবে এবার তিনি ৯০ বছরে পা দিয়েছেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল। তাই সরাসরি অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন কি না তা ঠিক হয়নি। লাইসা আহমদ জানান, হয়তো তাঁর (সন্‌জীদা খাতুন) লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হবে বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করা হবে। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠান শেষ হবে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।