২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মুক্তিযুদ্ধের গল্পে রোমাঞ্চিত কিশোরেরা

কিশোর আলোর মাসিক সভায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাচ্ছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শাহীন সামাদ l ছবি: প্রথম আলো

১৯৭১ সালের মে মাস। হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিবাহিনী। তাঁরা খবর পেয়েছেন, এ পথ দিয়েই যাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কনভয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ২৪ জনের দল। অধিকাংশই তরুণ। পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে মাটিতে মাইন পুঁতে রেখেছেন তাঁরা। একটু পর এল পাকিস্তানি বাহিনীর জিপ। মাইনের ওপর দিয়ে চলে গেল জিপ, মাইন ফাটল না। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা তরুণ যোদ্ধাদের। তবে কি মাইনগুলোতেই সমস্যা? একটু পর এল পাকিস্তানি সেনাভর্তি বিশাল এক ট্রাক। ঠিক জায়গায় আসতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো মাইন। শূন্যে উঠে গেল ট্রাক। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।সংখ্যায় তারা অনেক—প্রায় ১৫০ জন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ২৪ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর জয়ী হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিশোর আলোর মাসিক সভায় সেই গল্পই বলছিলেন শাহজামান মজুমদার বীর প্রতীক। তেলিয়াপাড়া মিশনের ২৪ জনের সেই দলটির একজন তিনি।

গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় কিশোর আলোর ৪০তম মাসিক সভা। বিজয়ের মাসে সভায় ছিল ভিন্ন আয়োজন। মুক্তিযোদ্ধারা অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন কিশোরদের সঙ্গে। দেশের বীর সন্তানদের মুখ থেকে বীরত্বের গল্প শুনে শিহরিত কিশোর আলোর পাঠকেরা।

সভায় এসেছিলেন অকুতোভয় তিন মুক্তিযোদ্ধা শাহীন সামাদ, শাহজামান মজুমদার বীর প্রতীক এবং শেখ আবদুল মান্নান বীর প্রতীক। একাত্তরের ভয়ানক দিনগুলোর বর্ণনা করছিলেন তাঁরা। রোমহর্ষক সেই বর্ণনা শুনে শিউরে উঠছিল অনেকেই।

আয়োজনে শুরুতে কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শাহীন সামাদকে। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প এবং মুক্তাঞ্চলে গিয়ে মুক্তির গান শোনানোই ছিল তাঁদের কাজ। ‘তোমরা জানো, ২৫শে মার্চ মাঝ রাতে আমাদের দেশের অনেক মানুষকে মেরে ফেলে পাকিস্তানিরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মাচের্র ভাষণের পর আমরা সবাই প্রস্তুত ছিলাম। এরপর সেদিনই সবাই জানল যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এরপর সাড়ে সাত কোটি মানুষ ফুঁসে উঠল। যেভাবেই হোক, দেশ স্বাধীন করতেই হবে।’ শাহীন সামাদ মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পেছনে কারণ বর্ণনা করলেন এভাবেই।

সবশেষে দুই নম্বর সেক্টরের গেরিলা বাহিনীর সদস্য শেখ আবদুল মান্নান বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁর ভূমিকা বর্ণনা করেন। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের অন্যায় অত্যাচার নিয়ে কথা বলেন এই বীর যোদ্ধা। তাঁর আশা, একদিন দেশের হাল ধরবে এই কিশোরেরাই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। করতালি আর শ্রদ্ধায় কিশোরেরাও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করল যে এই অসমাপ্ত কাজ তারা শেষ করবে খুব শিগগিরই।

অনুষ্ঠান শেষে তিন মুক্তিযোদ্ধার হাতে উপহার তুলে দেন কিশোর আলোর নির্বাহী সম্পাদক সিমু নাসের।