ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি
মহাপরিকল্পনা আটকে আছে, বিশৃঙ্খল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
নিজেদের অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা থেকে সরে গেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। মহাপরিকল্পনা অনুসারে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে দক্ষিণ সিটি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। রাজধানীর মাতুয়াইল ও সাভারের আমিনবাজারে অবস্থিত দুই ল্যান্ডফিল্ডের বর্জ্য ধারণক্ষমতাও শেষ পর্যায়ে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক ও পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে দুই সিটি করপোরেশন। এতে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়।
দুই বছর আগে এ খসড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে তা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়। প্রায় ২২ মাস পেরোলেও মহাপরিকল্পনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা মতামত জানায়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইতিমধ্যে নিজেদের মহাপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, বর্জ্য থেকে কয়েক ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হবে। বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী বায়োগ্যাস, কম্পোস্ট সার, রিসাইকেল, কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণবর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। কিন্তু ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে সরে এসে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সিটির মহাপরিকল্পনা একই ধরনের। এখন উত্তর সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ডিএনসিসির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনা অনুসরণ করছে। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে শুধু দক্ষিণ সিটির মহাপরিকল্পনা অনুমোদন দিলে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে পুরো প্রক্রিয়াই থমকে গেছে।
বর্তমান কার্যক্রম
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে এখন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে, পৃথক্করণ না করেই যতটুকু পারা যাচ্ছে প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তা ময়লা রাখার ঘর (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) বা এলাকাভিত্তিক ময়লার কনটেইনারে নিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ল্যান্ডফিল্ডে নিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সনাতন এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পরিবেশগত দিকটি উপেক্ষিত থাকে। এটি নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
আবার বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে অর্থ লুটপাটের বিশেষ চক্র। বর্জ্য সংগ্রহে এলাকাভেদে বাসাপ্রতি মাসে ৮০-২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীবাসীকে জিম্মি করে বছরে অন্তত ৬১৬ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন। এ পদ্ধতিতে বদল আনার সুপারিশ ছিল মহাপরিকল্পনায়।
দুই ল্যান্ডফিল্ডে পরিবেশের দূষণ
মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড দুটির ধারণক্ষমতা (আয়ুষ্কাল) শেষ হয়ে এসেছে। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড বলা হলেও এগুলোতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নেই। ময়লার স্তূপকে দূর থেকে মনে হবে পাহাড়। দক্ষিণ সিটির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডের কিছু কিছু জায়গায় ৭০ ফুট উঁচু বর্জ্যের স্তূপ দেখা গেছে। ১৪ আগস্ট ল্যান্ডফিল্ডটি ঘুরে দেখা যায়, উন্মুক্তভাবে ফেলা বর্জ্য পাশের জলাশয়ে পানিতে গিয়ে মিশছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়।
৫০ একর জমি নিয়ে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডের সক্ষমতা ২০০৬ সালে শেষ হয়। পরে আরও ৫০ একর জমি যুক্ত করা হয়। গত বছর সেই সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায় বর্জ্যের পরিমাণ। ল্যান্ডফিল্ড সম্প্রসারণের জন্য আরও ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ল্যান্ডফিল্ডের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির একাংশেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সে বর্জ্যের একটা অংশ পাশের খালে গিয়ে পড়ছে। পানি ও মাটি দূষিত হচ্ছে। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ল্যান্ডফিল্ডের পুরোনো অংশে গাছ লাগানো হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সীমানার বাইরে অবস্থান আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডের। ৫৩ একর জায়গা নিয়ে ২০০৬ সালে ল্যান্ডফিল্ডটির ব্যবহার শুরু হয়। জাইকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার কথা। ল্যান্ডফিল্ডের কয়েক শ মিটার দূর থেকেও দুর্গন্ধ নাকে ধাক্কা দেয়।
১১ আগস্ট আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড ঘুরে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গ্লাভস, মাস্কের মতো প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী ছাড়াই কাজ করছেন। পুরো ল্যান্ডফিল্ড থেকে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারে নিয়ে আসার জন্য উন্মুক্ত নালা করা। নালায় বর্জ্য জমে পানির প্রবাহ প্রায় থেমে আছে। ল্যান্ডফিল্ডের চারপাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও জলাধার রয়েছে। এসব জমি অধিগ্রহণের আগেই তাতে ল্যান্ডফিল্ডের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য ঢেকে রাখতে কোনো ধরনের সয়েল কাভার ব্যবহার করা হয়নি।
নতুন মহাপরিকল্পনার প্রেক্ষাপট
২০০৩ সাল থেকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে সহায়তা করছে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাইকার সহায়তায় ঢাকা সিটি করপোরেশন একটি বর্জ্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এ মহাপরিকল্পনার অধীনে কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। দুই সিটিতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ খোলা হয়। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডকে উন্মুক্ত থেকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ডে পরিণত করা হয়। উন্মুক্ত ডাস্টবিন কমিয়ে ময়লা রাখার ঘর বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) সংখ্যা বাড়ানো হয়।
তবে উত্তর সিটি করপোরেশন আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ডের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেনি। ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য নতুন বর্জ্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে দুই সিটি করপোরেশনের সভায় মহাপরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।
শূন্য বর্জ্যের পথ কত দূর
কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি, বিদ্যমান ল্যান্ডফিল্ড দুটির আয়ুষ্কাল বাড়ানো, জনসচেতনতা বাড়ানো, ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অংশীজনদের সক্ষমতা উন্নয়ন—নতুন মহাপরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম।
মহাপরিকল্পনার প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশগতভাবে উন্নত শহর: শূন্য বর্জ্যের পথে’। শূন্য বর্জ্য বা জিরো ওয়েস্ট মূলত একটি স্লোগান। ‘বর্জ্য কমানো, পুনর্ব্যবহার ও পুনচক্রায়ন—রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল’ এই তিনটিকে একত্রে ‘থ্রি-আর’ বলা হচ্ছে। বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা, বর্জ্য পৃথক্করণ ও পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, বিভিন্ন শোধন পদ্ধতি ব্যবহার করে ল্যান্ডফিল্ডের যাওয়া বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনা। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে এই থ্রি-আর বাস্তবায়ন
করা হবে।
‘ইকো টাউন’
নতুন মহাপরিকল্পনায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ‘ইকো টাউন’ বিষয়টি পুরোপুরি নতুন ছিল। এ পদ্ধতিতে বর্জ্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপনা করা হয়। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বায়োগ্যাস, কম্পোস্ট সার উৎপাদন, রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের মতো সুবিধা থাকবে এ ইকো টাউনে।
উত্তর সিটিতে দুটি ইকো টাউন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। এর একটি আমিনবাজার এবং আরেকটি নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর জন্য নাসিরাবাদ এলাকায়। দক্ষিণ সিটির মাতুয়াইলের একই ধরনের একটি ইকো টাউন গড়ে তোলার কথা বলা হয়।
উত্তর সিটি সরে গেছে মহাপরিকল্পনা থেকে
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন ৭৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প নেয়। ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প নেওয়ার পর ডিএনসিসি ইকো টাউন ধারণা থেকে সরে এসেছে। এখন বর্জ্য থেকে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে এগোচ্ছে।
ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাপরিকল্পনায় বদল আনা হবে। ডিএনসিসি চায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৩০ একর জমি চীনের প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিনিয়োগ করবে চীনের প্রতিষ্ঠান, সিটি করপোরেশন শুধু বর্জ্য দেবে।’
তবে এ কাজের জন্য চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি বাকি রয়েছে ডিএনসিসির। দৈনিক তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করবে ডিএনসিসি। বিনিয়োগকারীর উৎপাদিত বিদ্যুৎ নির্ধারিত দামে কিনে নেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২২ দশমিক ৭৫ সেন্ট বা ১৯ টাকা ৩৪ পয়সা।
তবে খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাই বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। ঢাকার বর্জ্যে ভেজা বা তরল অংশ থাকে বেশি। ঢাকার প্রতি কেজি বর্জ্যে ৬০০ কিলোক্যালরি ক্যালিরিফিক ভ্যালু (বর্জ্যের দাহ্য হওয়ার ক্ষমতা) থাকে। অথচ ১০০০ কিলোক্যালরি না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়।
মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত জাইকার সাবেক ন্যাশনাল টিম লিডার শরিফুল আলম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, মহাপরিকল্পনায় বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। গতানুগতিক ল্যান্ডফিল্ড নয়, আবার গতানুগতিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়। কারণ, সব বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ সিটি এগোচ্ছে মহাপরিকল্পনা ধরে
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মহাপরিকল্পনার নির্দেশনামতোই তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়নে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা করা হবে। আগামী বছরের শুরুতে ইকো টাউন বাস্তবায়নের কাজও শুরু হতে পারে।
নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়বে
ঢাকার দু্ই সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করতে হলে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতেই হবে। মহাপরিকল্পনার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে জনসচেতনতার বিষয়টি।
সিটি করপোরেশনের ১২ সদস্যবিশিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটি রয়েছে। কমিটিতে ১১ জন কাউন্সিলর ও একজন নির্বাহী প্রকৌশলী থাকেন। কমিটিতে বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের জায়গা নেই। মহাপরিকল্পনায় বর্তমান সংগ্রহ পদ্ধতি বদলে নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট স্থান থেকে প্লাস্টিক বিনের মাধ্যমে সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সরাসরি যোগাযোগ লাগবে।
অনুমোদনের দেরিতে বাস্তবায়ন বিলম্বিত
নতুন মহাপরিকল্পনায় ৩৪ ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ১৬ ধরনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে। মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এসব কাজ শুরুই করা যায়নি। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল ও আধুনিক হবে। অনুমোদন পেলে সে অনুযায়ী কাজগুলো দ্রুত শুরু করা যাবে।
মহাপরিকল্পনার বিষয়টি দেখভাল করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহাপরিকল্পনায় অনেক কারিগরি বিষয় আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করা হবে। উত্তর সিটি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে, মহাপরিকল্পনায় এ বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্যের চরিত্র বা ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা হতে হবে। মহাপরিকল্পনাতেই সে বিষয়টিই বলা হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নত শহর গড়তে হলে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দ্রুত শুরু করতে হবে।