বেগমগঞ্জে নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের শিকার হওয়া থেকে এক নারীকে সুরক্ষায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চৌকিদারের অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তা ছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, তাঁরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেননি।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বতঃপ্রণোদিত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলামকে (৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট পুলিশ কর্মকর্তা) সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও চৌকিদার আলী আসগরের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকারসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সম্প্রতি অনৈতিক ভিডিও ধারণ করে তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করে ভুক্তভোগীকে জিম্মি করা মহামারির আকার ধারণ করেছে। ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেল করতে বিবেকহীনভাবে এমন কাজ করা হচ্ছে, যা ভুক্তভোগীর জীবন ধ্বংস করছে।
এমন অপরাধ রোধে ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান কঠোরভাবে মানার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আদালত বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে আর সাহস না পায়। এ ক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।
পরে গত বছরের ৫ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এ ছাড়া পাঁচটি পয়েন্টে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন। কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলে রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী, ব্যাখ্যাকারী হিসেবে পক্ষভুক্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক শুনানি করেন। স্বেচ্ছায় আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী শুনানিতে অংশ নেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ও মফিজুল ইসলাম ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। তাঁদের বক্তব্য যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য নয়। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ চৌধুরীর বিটভিত্তিক কর্মকর্তাদের কার্যক্রম তদারকিতে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও আদালত কর্তৃক যৌক্তিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। এলাকার চৌকিদারও দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।