বুড়িগঙ্গার তীরে ১৭০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট এলাকায় ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে নদীর তীরভূমির অন্তত তিন একর জমি উদ্ধার হয়েছে। এ সময় নদীর জায়গা দখল করে ভরাট করা এক হাজার ফুট মাটিও অপসারণ করা হয়।
রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাংসদ হাজি সেলিমের লোকজন নদীর জায়গা দখল করে সেখানে ফলের আড়ত বসিয়েছিলেন। গত বছরের জুলাইয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির সময় আবার সেখানে দোকানপাট বসানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র বলছে, করোনাকালে কেরানীগঞ্জের ঝাইচরে গত মে মাসেও সাংসদ হাজি সেলিমের লোকজন নদীতীরে বর্জ্য ফেলে ভরাটের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তখন ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছিল।
আজকের উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল। এ সময় ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী, উপপরিচালক শাজাহান সিরাজ, সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম, মো. আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা পুরান ঢাকার বাদামতলী ঘাট এলাকায় বাঁশের ছাপরা দিয়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফলের দোকান উচ্ছেদের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। দিনভর অভিযান চালিয়ে ওয়াইজঘাট এলাকা থেকে বাবুবাজার সেতু পর্যন্ত ১২০টি ফলের আড়ত, ৫০টি টংদোকান এবং দখলকৃত নদীর তীরভূমির ৩ একর জমি উদ্ধার ও নদীর জায়গায় ভরাটকৃত ১ হাজার ফুট মাটি অপসারণ করেন।
অভিযান চলাকালে বাদামতলী এলাকার ফল ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর ভাই রাকিব হোসেন ১৫ ফুট ও ১২ ফুট জায়গা ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাৎসরিক ভাড়া হিসেবে বরাদ্দ নিয়ে আসেন। এ জায়গায় তাঁরা ফলের দোকান করেছেন। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, নদীর জায়গা বাৎসরিক ভাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে যেসব দোকান গড়ে উঠেছে, এর সবই অবৈধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ফল ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় রাকিব হোসেনের লোকজন বাদামতলী এলাকায় বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করে অর্ধশত ছোট ছোট ফলের দোকান ভাড়া দিয়েছেন। প্রতি মাসে এসব দোকান থেকে ভাড়ার নামে টাকা তোলা হতো। কিন্তু এত দিন যাঁরা ভাড়ার নামে টাকা নিয়েছেন, অভিযান শুরুর পর তাঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী বলেন, নদীর জায়গা কাউকে দখল করতে দেওয়া যাবে না। দখলদার যত প্রভাবশালী হোন না কেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে ওয়াইজঘাট, বাদামতলী ও মিটফোর্ড ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।