প্রিয় আজিমপুরেই দাফন কাওসার আহমেদ চৌধুরীর

কাওসার আহমেদ চৌধুরী এখন ছবির মানুষ

গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে দাফন করা হয়েছে।

জীবনের প্রায় পুরো সময়টাই আজিমপুর এলাকায় কাটিয়েছেন। মাঝের কিছু সময় বাদে ১৯৬২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আজিমপুরে ছিলেন। সেই প্রিয় আজিমপুরেই সমাহিত করা হলো কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে। এর আগে ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে জানাজা হয় প্রথম আলোর ‘আপনার রাশি’র লেখক কাওসার আহমেদ চৌধুরীর।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ৭৭ বছর বয়সে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান।

গীতিকার ও প্রথম আলোর ‘আপনার রাশি’–এর লেখক কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী কালজয়ী অনেক গান রচনা করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে-তে সাপ্তাহিক রাশিফল ‘আপনার রাশি’লেখা শুরু করেন। তিনি প্রথাগত কোনো জ্যোতিষী ছিলেন না। নিজের লেখা রাশিফলের শুরুতেই তিনি লিখতেন, ‘নিজের ভাগ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা ফেট বা নিয়তি।’ রাশিচক্রে ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন তিনি।

সৃজনশীল মানুষ হিসেবে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর রাশিফল শুধু ভাগ্যগণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সংগীত, কবিতার লাইন, রম্য—নানা কিছু মিলিয়ে একেকটা রাশির কথায় থাকত সাহিত্যগুণ। ১৯৯৯ সালে ছুটির দিনে ক্রোড়পত্রে ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশের পরই পাঠক এটি লুফে নেন।

সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি প্রকাশিত কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ‘দৃষ্টিতে কেমন যাবে ২০২২’ পর্যন্ত তাঁর রাশিফলের জনপ্রিয়তা শুধুই বেড়েছে। কোনো শনিবার ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশিত না হলে অসংখ্য পাঠকের ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক পেজের মন্তব্যে একটাই প্রশ্ন, ‘আজ আপনার রাশিফল কেন প্রকাশিত হলো না?’ ১ জানুয়ারির পরই নানা জটিলতায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর একমাত্র সন্তান অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আহমেদ সাফি চৌধুরী ঢাকায় এসে ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়াটিভ কেয়ার সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করান। ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একটা বেসরকারি ক্লিনিকে স্থানান্তর করা হয়। সেদিনই জানা যায় তিনি কোভিডে আক্রান্ত। কাওসার আহমেদ চৌধুরী কিডনি রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। আহমেদ সাফি চৌধুরী বলেন, ‘আব্বার বিভিন্ন অঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ছিল। তবে কিছুটা চেতনা ছিল।’

১৯৪৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিলেটে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। তাঁর বাবা মোসাহেদ চৌধুরী। কাওসার আহমেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। চারুকলায় পড়াশোনা করলেও সম্পন্ন করেননি। চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর আগ্রহ ছিল। একাধিক তথ্যচিত্রও তিনি নির্মাণ করেন। পেশাজীবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন।

তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।