পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের একটি মহল বাধা দিচ্ছে

পার্বত্য চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বক্তারা
ছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য চুক্তির ২৪ বছর পর চুক্তি বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। পার্বত্য চুক্তিতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যে নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেগুলো খারিজ করে দেওয়ার অপচেষ্টাও হচ্ছে।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন বক্তব্য উঠে এসেছে। পার্বত্য চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো–চেয়ার সুলতানা কামাল বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল, সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

কিন্তু আমরা সেই জায়গা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেখানে শান্তির কোনো আভাস আমরা পাচ্ছি না। সেখানে জনসংখ্যার সমীকরণ বদলে গেছে। নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। দলীয়করণ ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসন সেখানে বিরাজ করছে। তার ফলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখন চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট করছেন না। আমরা আশা করব, তিনি আমাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে যেভাবে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহ দেখিয়েছেন, চুক্তি বাস্তবায়নেও তাঁর পদক্ষেপ স্পষ্ট করবেন।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য ও বেসরকারি সংগঠন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, ২৪ বছর আগে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। সে সময় রাষ্ট্রের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এ চুক্তি করেছিল। কিন্তু চুক্তিতে যে শাসনব্যবস্থা, ভূমিব্যবস্থা ও নাগরিক অধিকারের কথা বলা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, পাহাড় কিছু মানুষের কাছে লাভজনক হয়ে উঠেছে। সেখানে পর্যটনের রিসোর্ট করা হচ্ছে। অথচ সারা দেশের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ে দারিদ্র্য অনেক বেশি।

সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘সরকারপক্ষ বা যারা চিন্তাভাবনা করে, তারা মনে করে, ওরা (পাহাড়ি জনগোষ্ঠী) এখন বিভিন্নভাবে দ্বন্দ্বে বিভক্ত। ওরা দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের নিয়ে ভাবনার দরকার নেই। কাজেই ওখান থেকে ওদের উচ্ছেদ করতে পারলে সুবিধার হয়ে যায়।’

ভূমি সমস্যাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা উল্লেখ করেন বেসরকারি সংগঠন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের চলার মতো বাজেট দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন সংশোধন করা হলেও ৬ বছরের বিধিমালা অনুমোদিত হয়নি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। তিনি তাঁর প্রবন্ধে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। এ ছাড়া তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসংশ্লিষ্ট সব আইনের সংশোধন এবং প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদে অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানান।