পদ্মা সেতু হলেও এই রুটে বাস অপ্রতুল, ঈদযাত্রায় টিকিট পাচ্ছেন না অনেকে
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা বাসের টিকিট পাচ্ছেন না। বাস কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর কারণে বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ ওই অঞ্চলের লঞ্চে যাওয়া যাত্রীরা এখন এই রুট ব্যবহার করছেন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের যেসব যাত্রী আগে গাবতলী হয়ে বাড়ি যেতেন, তাঁরাও এখন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসছেন। কিন্তু সায়েদাবাদ হয়ে এসব রুটে বাড়তি এই যাত্রীর চাপ সামলাতে নতুন করে বাস নামানো হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে বেশির ভাগ যাত্রীই বাসের টিকিট পাচ্ছেন না। এই চাপ তাঁরা সামলাতে পারছেন না।
এদিকে বাসের টিকিট পেলেও কয়েক ঘণ্টা টার্মিনালে বসে থাকতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীদের।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে টার্মিনালে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুস সাত্তার। বেলা একটায়ও তিনি টিকিট পাননি। এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে ঘুরেও টিকিট না পেয়ে হতাশ সাত্তার।
পিরোজপুরের আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ভ্যাপসা গরমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিন ঘণ্টা টার্মিনালে। অনেক চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। কীভাবে এখন বাড়ি যাব, সেই চিন্তায় আছি।’
আবদুস সাত্তারের মতো একই ভোগান্তিতে পড়েছেন পটুয়াখালীর মোর্শেদ আলম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মোর্শেদ সায়েদাবাদ টার্মিনালে আসেন সকাল সাড়ে ১০টায়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। বিরক্তির সুরে মোর্শেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সায়েদাবাদ টার্মিনালে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে ঘুরেও যে টিকিট পাব না, সে ধারণা আমার ছিল না। প্রচণ্ড গরমে টিকিট না পেয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি।’
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলার লোকজন এবার ভিড় করছেন সায়েদাবাদ টার্মিনালে। যে কারণে এখানকার বাসগুলো এত যাত্রীর টিকিট দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অনেকে ফিরে গিয়ে আবার লঞ্চে যাচ্ছেন।
সায়েদাবাদ টার্মিনালের বাস কাউন্টারগুলোর ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর গাবতলীর তুলনায় অনেক ছোট টার্মিনাল হচ্ছে সায়েদাবাদ টার্মিনাল। অথচ এই টার্মিনাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে আসছে। এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আগে যাঁরা কখনো সায়েদাবাদ টার্মিনাল হয়ে বাড়ি যাননি, তাঁরা এবার টার্মিনালে ভিড় করেছেন। তাই যাত্রীর তুলনায় বাস কম। সব যাত্রীকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আজ সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী মোড় ঘুরে দেখা গেছে, তিন রুটের ফিরতি বাসগুলো সায়েদাবাদ টার্মিনালে জড়ো হওয়ায় যানজট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসগুলো যানজটে আটকে থাকছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় সায়েদাবাদ টার্মিনালে আসেন মোহাম্মদ সুমন। বেলা ১১টায়ও তাঁর বাস এসে পৌঁছায়নি। সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যাব খুলনায়। টিকিট কেটেছি টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস নামের বাসে। আড়াই ঘণ্টা কাউন্টারে এসে বসে থাকলেও বাস আসেনি।’
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসের সহকারী মফিজ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী আর ধোলাইপাড় মোড়ে গাড়ি যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। ফলে ঠিক সময়ে গাড়ি কাউন্টারে আসতে পারছে না। তবে ঢাকা-ফেনী কিংবা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের গাড়ি যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। স্টার লাইনের সায়েদাবাদ টার্মিনালের বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, যানজট তেমন নেই। যথাসময়ে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে।