২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নীতিমালা না মেনেই খোঁড়াখুঁড়ি

সম্প্রতি সংস্কার করা হয় উত্তরার একটি রাস্তা। অনুমতি ছাড়াই সেটি খুঁড়ে ফেলেছেন ওয়াসার ঠিকাদার।

জনগণের ভোগান্তি কমাতে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ করা হয়েছে। কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ি চলছে নীতিমালা না মেনেই। গত শনিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়ায়।আশরাফুল আলম

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি মানেই জনভোগান্তি। তা কমাতে করা হয়েছিল ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে ওই নীতিমালা না মেনেই। সিটি করপোরেশন বলছে, বিভিন্ন সংস্থার নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অমান্য করছে। নীতিমালা বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সড়ক খনন নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। অনুমতি ছাড়াই কেউ রাস্তা খুঁড়লে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

গত ২৬ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। মেট্রোরেলের কারণে সড়কের প্রস্থ অনেকটাই কমে গেছে। এর মধ্যেই সড়কের একটি বড় অংশজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজীপাড়া থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে পাশাপাশি দুটি যানবাহন চলার সুযোগ নেই। ফলে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকছে।

এই সড়কে ওয়াসার ‘ঢাকা মহানগরের ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। ভূগর্ভস্থ পাইপ বসানোর কাজ শেষ। সড়কের যে অংশে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, তা এখন যান চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে। কোন সংস্থা খোঁড়াখুঁড়ি করেছে, তার কোনো সাইনবোর্ড টানানো হয়নি। কোনো সতর্কতামূলক ফিতাও লাগানো হয়নি। সড়ক মেরামতের জন্য আনা ইট-পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অব্যবহৃত ও ভাঙা পাইপ পড়ে আছে সড়কেই।

মিরপুর থেকে সদরঘাটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী বাসেত মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস ধরে রাস্তাটি এভাবে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতেই ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। সঙ্গে ধুলাবালির অত্যাচার। বাসের কাচ লাগিয়েও ধুলা আটকানো যায় না।

নীতিমালা না মেনে খোঁড়াখুঁড়ি

ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে। সড়ক খনন ও পরে মেরামত কার্যক্রমে সমন্বয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতেই ২০১৯ সালের ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা’ প্রণীত হয়। দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএলের মতামত ও সুপারিশ নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

নীতিমালা অনুযায়ী কোনো সড়কের পুরোটা একসঙ্গে খোঁড়া যাবে না। মাসের পর মাস একটানা কোনো সড়ক খোঁড়া যাবে না। ১৫ দিনের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কাজ করতে হবে। ধুলাবালি উড়ে যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়ে, সে জন্য নিয়মিত পানি ছিটাতে হবে। হলুদ বা লাল ফিতা দিয়ে খনন এলাকা ঘিরে রাখতে হবে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে মালামাল মজুত করে রাখা যাবে না। বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিয়োজিত ঠিকাদারদের চুক্তিতে নীতিমালার সব শর্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা যুক্ত থাকবে। নীতিমালার কোনো শর্তের ব্যত্যয় হলে ঠিকাদারকে জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হবে।

নীতিমালার এসব শর্ত মেনে কাজ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওয়াসার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটির পরিচালক শওকত মাহমুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে বড় ব্যাসের পাইপ বসানোর কাজ শেষ। সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে সড়ক যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। এরপর সড়কের পশ্চিম পাশে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হবে।

উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বেশ কিছু রাস্তার উন্নয়নকাজ গত আগস্টে শেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মাত্র পাঁচ মাস আগে সংস্কার করা ওই রাস্তা খুঁড়ে ফেলেছেন ঢাকা ওয়াসা নিয়োজিত ঠিকাদার। অনুমতি ছাড়াই রাস্তা খোঁড়ায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

২৬ ডিসেম্বর সকালে ডিএনসিসির অঞ্চল-১-এর প্রকৌশল বিভাগের কার্যসহকারী সোলায়মান কবীর জিডিটি করেন। এতে বলা হয়েছে, ডিএনসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে নতুন উন্নয়ন করা ৯/বি, ১৩ ও ৩৪ নম্বর সড়ক গত শনিবার বিনা অনুমতিতে খোঁড়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার নিয়োজিত ঠিকাদার রাস্তা খুঁড়ে ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থাপনের কাজ করছেন। এতে ডিএনসিসি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

রাস্তাটি খুঁড়েছে ওয়াসার ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটির পরিচালক আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি চেয়েছিল। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

সড়ক খনন নীতিমালা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে না জানিয়ে সড়কে খননকাজ শুরু করলে মূল খরচের পাঁচ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক খনন নীতিমালা অমান্য করায় কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করা হলেও ঠিকাদারেরা নিয়ম মানতে চান না। নীতিমালাটি বাস্তবায়নে সরকারি সব সংস্থার আন্তরিকতা প্রয়োজন।