নিজের বাসা পরিষ্কারে কোনো লজ্জা নেই: মেয়র আতিক

নিজের বাসাবাড়ি নিজে পরিষ্কার কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ছবি: প্রথম আলো

নিজের বাসাবাড়ি নিজে পরিষ্কার করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আসুন, সবাই প্রতি শনিবার সকাল ১০টায় ১০ মিনিট নিজেদের বাসাবাড়ি পরিষ্কার করি।’

আজ শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানী উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে মেয়র নিজেই নিজের বাসা পরিষ্কারের কাজ করেন। কাজ শেষে সাড়ে ১০টার দিকে মেয়র বাংলাদেশ ক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গের কথা বলেন। সে সময় এসব কথা বলেন তিনি।

মেয়র বলেন, ‘বাসা পরিষ্কার করতে গিয়ে রেফ্রিজারেটরের পেছনের ট্রেতে আমি জমে থাকা পানি পেয়েছি এবং সেটা পরিষ্কার করেছি। ছাদে ফুলের টবের নিচের পাত্রেও পানি জমে ছিল। সেই পানিও ফেলে দিয়েছি। আপনারাও সবাই নিজ নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার করুন। আর আজকে যারা সময় পাননি, তারা সপ্তাহের অন্য কোনো দিন সময় নিয়ে পরিষ্কারের কাজটি করুন।’

নির্মাণাধীন ভবনে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘৬৫ ভাগ এডিস মশার লার্ভা নির্মাণাধীন ভবনে পাওয়া যাচ্ছে। আর ২০ ভাগ লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে ওয়াসার পানির মিটারে। এই দুটি মিলিয়ে যে ৮৫ ভাগ লার্ভা, তা যদি ধ্বংস করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারব।’

পুরোনো জিনিসপত্র ফেলে রাখার বিষয়ে মেয়র আতিক বলেন, অনেকে গাড়ির পুরোনো টায়ার জমিয়ে রাখেন। জমিয়ে একত্রে বিক্রি করার আশা করেন। কিন্তু এটা চিন্তা করেন না যে সেখানে এডিস মশার প্রজনন হলে, সেই মশা কামড়ালে আর ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে চিকিৎসার পেছনে কত টাকা ব্যয় হবে।

মশার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ আন্দোলন স্নো-বলের মতো। ধীরে ধীরে গড়িয়ে গড়িয়ে এই বল বড় হবে। আমাদের এই আন্দোলনও একজন থেকে আরেকজনের কাছে ছড়াতে ছড়াতে একটা বিশাল সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।’

‘সবার ঢাকা’ অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘নিজেদের বাসার আশপাশে কোথাও কোনো বাসায় যদি দেখেন পানি জমে আছে, সেখানে মশার লার্ভা হচ্ছে, সেই ছবি তুলে “সবার ঢাকা” অ্যাপসে অভিযোগ করবেন। তাহলে পুরস্কার দেওয়া হবে। আপনি যার বাসার ছবি তুলে দেবেন, তার বিরুদ্ধে জরিমানার মাধ্যমে পুরস্কারের ব্যবস্থা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে মেয়র ৪ নম্বর সেক্টরের ভেতর পরিদর্শনে বের হন। এ সময় উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর বাসার মালিক দম্পতি এমদাদুল ইসলাম ও ফারজানা ইসলামকে বাসা পরিষ্কার করতে দেখেন। মেয়র এ কাজের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান।

এরপর মেয়র দলবল নিয়ে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে যান। সেখানে অঞ্চল-৬–এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিন চিরুনি অভিযান চালাচ্ছিলেন।

অভিযানে ১২ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসার নিচে পুরোনো চারটি টায়ারে বিপুল পরিমাণ মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বাড়ি মালিক পাপিয়া সুলতানা। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এরপর শাহ মকদুম অ্যাভিনিউ ৬ নম্বর প্লটে অ্যাসিউর ডেভেলপমেন্টের একটি নির্মানাধীন ভবনে একটি বালতি ও কলসির ভেতর জমে থাকা পানিতে লার্ভা পান করপোরেশনের কর্মীরা।

মেয়র সেখানে বলেন, ভবন নির্মাণে অবশ্যই পালনীয় স্বাস্থ্যবিধিতে ঠিকই লেখা আছে, ডেঙ্গু মশা বিস্তার ঠেকাতে নিয়মিত সাইট পরিষ্কার ও কোথাও পানি জমতে দেওয়া হবে না। এটা শুধুই লিখে রাখা হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা কোনো কাজ করছে না। পরে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার আবদুল খালেককে ২ লাখ জরিমানা করা হয়।

সুপারভাইজার আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাদের ভুল হয়েছে। এমন ভুল আর হবে না।