দেশে ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধ এবং বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে আজ বুধবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্র-নারী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ওই কর্মসূচি থেকে দাবিগুলো আদায়ের জন্য আগামী নভেম্বর মাসজুড়ে দেশের সব বিভাগে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
গত শনিবার ফেনীতে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে লংমার্চে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, পাহাড়-সমতলে অব্যাহত নারী ধর্ষণের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে আজকের এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে বাম ধারার সংগঠনগুলো ‘রাজপথ অবরোধ’ নামের ওই কর্মসূচি আয়োজন করে। এর আওতায় আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় পল্টন থেকে কাঁটাবন ও শাহবাগ থেকে বাংলামোটর অভিমুখী মূল সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় তীব্র যানজট।
অবরোধ শুরুর আগে বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সৈকত আরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাঁটাবন মোড় ঘুরে এসে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা আটকে অবস্থান নেন বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। টায়ার জ্বালিয়ে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশের ফাঁকে ফাঁকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ ও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে নানা স্লোগানে মুখরিত ছিল শাহবাগ এলাকা৷
শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চলা সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু প্রমুখ বক্তব্য দেন৷
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়৷ তিনি বলেন, ‘আজ শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে নমুনা দেখিয়েছি, এ থেকে সরকারের বুঝে নেওয়া উচিত যে আমরা যদি সারা দেশের রাজপথ অবরোধ করি, তাহলে এই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পালানোর সুযোগ পাবে না৷’ তিনি জানান, নভেম্বর মাসজুড়ে তাঁরা দেশের সব বিভাগে মহাসমাবেশ কর্মসূচি করবেন৷
ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে ৯ দাবির মধ্যে আরও রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা, সিডও সনদে স্বাক্ষর এবং তার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, সাহিত্য-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা এবং সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চাকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা; তদন্তের সময়ে ভুক্তভোগীকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করা এবং তাঁর আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; অপরাধবিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা৷