দুর্ঘটনার পর একে একে উধাও সব
সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী দুজনকে আহত হতে দেখেন। তাঁর মনে হয়েছিল গাড়ির চালক মাতাল। ঘটনাস্থলে পুলিশের তোড়জোড় দেখা গেলেও রোববার জানা যায় ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
দুর্ঘটনার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়িটি থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল বলে কাগজপত্রে দেখা যায়। কিন্তু সেখান থেকে গাড়ি কোথায় গেল, জানা যায়নি। উধাও গাড়ির চালক এবং দুর্ঘটনার শিকার দুজনও। সবই যেন মিইয়ে গেছে। পুলিশও আর এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না।
ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে? মুঠোফোনে একজন প্রত্যক্ষদর্শী এই প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুলের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন বাসায় ফিরছিলেন। হঠাৎ একটি গাড়িকে দ্রুতবেগে ছুটে আসতে দেখেন। গাড়িটি পলাশী থেকে শহীদ মিনারের দিকে এগোচ্ছিল এঁকেবেঁকে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কা করছিলেন তাঁর মতো অনেকেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটি বিকট শব্দে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।
এ সময় গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মক আহত দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রথমে একজন পুরুষকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেলেও, পরে একজন নারীকেও দেখা যায়। গাড়ির ধাক্কায় ওই নারীর মাড়ির দাঁত পড়ে গিয়েছিল। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, গাড়িচালক মদ খেতে খেতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং গাড়ির ভেতরে মদের বোতল রয়েছে, এমন কথা তিনি শুনেছিলেন।
ঘটনাস্থলে টহল পুলিশ ছিল। তারা এসে পরে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এরপর কী হলো, সে সম্পর্কে খোঁজ নিতেই ওই প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানা যায়, যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটায় সেটির নম্বর ছিল ভ-১১-১৮০৯।
চালাচ্ছিলেন মো. আশিক রহমান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নিশ্চিত করেছে, গাড়িটি সরকারি পরিবহন পুলের। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিশ্চিত করেছে, আশিক সে রাতে অতিরিক্ত মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্যবস্থাপত্রে লেখা, ‘অ্যালকোহল অ্যাবিউজ’ (অতিরিক্ত মদ্যপান)। পরামর্শ, ‘স্টম্যাক ওয়াশ’ (পাকস্থলী পরিষ্কার)। ব্যবস্থাপত্রে ‘পুলিশ কেস’ সিল মারা আছে। ওই রাতে শাহবাগ থেকে দুর্ঘটনার শিকার আরও তিনজন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের নাম মুমু, শান্তু ও আল আমিন।
কিন্তু ভ-১১-১৮০৯ নম্বরের গাড়িটির ধাক্কায়ই তাঁরা আহত হয়েছিলেন কি না, জানা যায়নি। তবে ডিসি ট্রাফিকের (দক্ষিণ) কার্যালয় রেকার ভাড়া বাবদ ১২০০ টাকা আদায় করেছিল, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও জানা যায়, গাড়িটি শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলামকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শনিবার আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। এটুকু বলেই তিনি ফোন ছেড়ে দেন। দুর্ঘটনার শিকার নারী-পুরুষ কোথায়, সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করার কোনো সুযোগই দেননি তিনি।
‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’-এর হিসাবে, গেল বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৭০২টি। এসব দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২২৭ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৯৫৩ জন মানুষ আহত হয়েছেন । সবচেয়ে বেশি (৩০৯টি) সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকায়। এরপরও মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর ও আহত করার দায়ে কেন আশিক রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।