দুই ঘটনায় বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক বদলেছে: তুরস্কের রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেছেন, দুটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও তুরস্কের সম্পর্কোন্নয়নে মূল ভূমিকা রেখেছে। এর একটি হচ্ছে ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি এবং ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পরপরই বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ানের কক্সবাজার সফর। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত।
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকায় অবস্থিত তুরস্ক দূতাবাসে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপকালে মুস্তাফা ওসমান তুরান এ কথা বলেন। এ সময় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন ভালো। তবে সম্পর্ক যে পর্যায়ের হওয়া উচিত, ততটা ভালো নয়।
ঢাকা-আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফরের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, উচ্চপর্যায়ের সফর হলে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়। এক দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল অন্য দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পায়। এতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পথ সুগম হয়।
তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের মতবিনিময়ের সময় প্রশ্নোত্তর পর্বের বড় অংশ জুড়ে ছিল দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান পর্যায়ে আসার কারণ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন জানানো ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা ইত্যাদি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় ভুল–বোঝাবুঝিতে তৃতীয় পক্ষ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, যারা দুই দেশের সম্পর্ক ভালো হোক এটা চায় না, তারাই এই কাজ করেছে। তবে সেই তৃতীয় পক্ষটি কে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বৈধ, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন কূটনীতিকেরা। রাজনৈতিক দলের বিষয়ে আমাদের কোনো অবস্থান নেই। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ এটা ঠিক করবে।
আমাদের অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। বাংলাদেশের অবস্থানকে তুরস্ক সম্মান করে। তবে এর অর্থ এই নয় যে কোনো দেশ তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে না। বিশেষ করে সেটা যখন বাংলাদেশের স্বার্থে হয়ে থাকে।’
তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১৬ সালের জুলাইতে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ তখন ইউরোপে তুরস্কের মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোও এরদোয়ান সরকারকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দেয়নি।
এটাতে স্পষ্ট হয়, দুই দেশের সম্পর্কটা কত জোরালো। এর এক বছর পরই ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পরপরই তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে সবার আগে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির সফর করেন।
মুস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ নানা ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাঁর মতে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, উদ্যোক্তা হিসেবে দক্ষতা এবং শ্রমের সহজলভ্যতা সব মিলিয়ে এ দেশে ব্যবসার বিষয়ে তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিতে এশিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে কৌশল ঠিক করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রদূত।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহফুজ মিশু। সমাপনী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনউদ্দীন।