দরদাম করছেন ক্রেতারা, বিক্রি হচ্ছে কম

রাজধানীতে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচা।
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার আলফাডাঙ্গা থেকে নয়টি গরু নিয়ে উত্তর শাহজাহানপুরে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটে এসেছেন মাহবুবুল হক। এখন পর্যন্ত তিনি একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। বিক্রেতা মাহবুবুল হকের ধারণা, আগামী দুই দিনের মধ্যে তিনি তাঁর পশুগুলো বিক্রি করতে পারবেন।

এ বিক্রেতার মতো হাজারো গরুর ব্যাপারী তাঁদের পশু নিয়ে অপেক্ষায় আছেন উত্তর শাহজাহানপুরের পশুর হাটে। যদিও এখন পশুর হাটে বেচাবিক্রি জমে ওঠেনি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে কোরবানির হাট। চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত।

ঢাকায় সাধারণত পশু কেনার পর রাখার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় অনেকেই আগেভাগে পশু কিনতে আগ্রহ দেখান না।

বেলা পৌনে দুইটার দিকে এ পশুর হাটে কথা হয় শান্তিনগরের বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে। এই ব্যাংক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দরদাম কেমন, তা দেখতে এসেছেন। গরু কেনার পর বাসার নিচে রাখার ব্যবস্থা এখনো ঠিক হয়নি। ঈদের আগের দিন তিনি গরু কিনবেন।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীতে ১৮টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০টি আর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসেছে ৮টি। এর বাইরে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ও সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাটেও বেচাবিক্রি হচ্ছে।

উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় বসা পশুর হাট ঘুরে দেখা গেল, ছোট-বড় অসংখ্য গরু হাটে আনা হয়েছে। অনেকেই দেখতে আসছেন, এর মধ্যে কেউ কেউ পশু কিনেছেন।
হাট পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতবারের চেয়ে এবার গরু বেশি এসেছে। টুকটাক বিক্রিও হচ্ছে। দুপুর নাগাদ ৩০ থেকে ৩৫টি গরু বিক্রি হয়েছে।

এ হাটের সবচেয়ে বড় গরু এনেছেন মোহাম্মদ হাসান। সাতক্ষীরা থেকে আসা এ বিক্রেতা জানান, তিনি যে গরুটি এনেছেন, এর ওজন ২৭ মণ হবে।‌ দাম চাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা। গরুর নাম রেখেছেন বাবুজি। এ বিক্রেতা জানান, গরুর আকৃতি দেখে অনেকেই দাম জিজ্ঞাসা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি প্রত্যাশিত ক্রেতা পাননি।

বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপবাগ এলাকায় অবস্থিত অস্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই হাটে অনেক গরু এসেছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা।

রাজধানীতে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচা।
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে পশুর হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য ইজারাদারের নিয়োগ করা কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও কিছু কিছু ক্রেতা ও বিক্রেতা মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন দেখা গেছে। পশুর হাটে এমন অনেক ক্রেতাও এসেছেন, যাঁদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

এ দুই পশুর হাটে কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশুর দাম এবার কিছুটা চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, তাঁদের এবার বেশি দামে গরু কিনতে হয়েছে।‌ চুয়াডাঙ্গার এক ব্যাপারী জানান, বাজারে তিনি ছয়টি গরু এনেছেন।
উত্তর শাহজাহানপুর হাটে গরু কিনতে এসেছেন খাইরুল বাকের নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত বছর যে গরু দেড় লাখ টাকায় কিনেছেন, এবার একই আকৃতির গরু ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাম চাচ্ছেন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন করোনাকালীন কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনায় অবশ্য বেশ কয়েকটি শর্ত ইজারাদারদের দিয়েছে। এর মধ্যে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা, মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করা, তাপমাত্রা মেপে হাটের ভেতরে লোকজনকে প্রবেশ করাসহ নানা বিষয় রয়েছে। তবে হাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলেন, পশুর হাটে যে পরিমাণ লোকসমাগম হয়, নানা বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা তাঁদের জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না।

দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।