ত্বকী হত্যায় জড়িতরা রাষ্ট্রকেও মানতে চায় না: আইভি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যায় প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। রাষ্ট্রের ছত্রচ্ছয়ায় তারা বেড়ে উঠেছে। এমনকি তারা রাষ্ট্রকেও মানতে চায় না।
আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ত্বকীর ২৬তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে জাদুঘরে সপ্তম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ২০২১-এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইভী। এর আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।
অনুষ্ঠানে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন করে মোট ৬০ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না, সেটা নারায়ণগঞ্জের লোকজনসহ গোটা দেশের লোকই বুঝতে পারে। এখানে এমন প্রভাবশালী লোকজন জড়িত, রাষ্ট্রের ছত্রচ্ছায়ায় যাদের বেড়ে ওঠা। নিজেদের তারা এমনই মনে করে যে রাষ্ট্রকেও তারা মানতে চায় না। রাষ্ট্র তাদের ভয় পায় কি না, তা জানি না। তা না হলে কী এমন গোপন রহস্য যে এই বাচ্চার (ত্বকী) হত্যাকারীর বিচার হবে না?’
ত্বকী হত্যার বিচার হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে আইভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে থেকেই বিচারের ব্যবস্থা হবে। হয়তো সময়ের কিছু কারণে সেটা হচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ত্বকী একটা পাঠাগারে যাচ্ছিল। সে পাঠাগার থেকে বই আনত। আনার পথে তাকে আক্রান্ত হতে হলো। এটা একটা প্রতীকের মতো যে আমাদের দেশে সংস্কৃতিচর্চা কেমন বিপদের মধ্যে আছে। সে জন্য আমাদের কর্তব্য হবে দেশে একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করা। এর লক্ষ্য হবে সংবিধানের মূলনীতি বাস্তবায়ন তো বটেই, আরও বেশি।
সেটা হলো একটি সামাজিক বিপ্লব ঘটানো। সেটা বাংলাদেশে ঘটেনি। ব্রিটিশ আমলে যে সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম, পাকিস্তান আমলে তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিলাম, আজকে বাংলাদেশে তার চেয়েও খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।’
ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার শুধু নয়, ত্বকীরা যেন নিরাপদে এখানে থাকতে পারে। ত্বকীরা যেন তাদের মেধা, প্রতিভা, সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারে। এই সমাজ যেন মানবিক হয়।
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ত্বকীকে হত্যার এক বছর পর ২০১৪ সালের ৫ মার্চ র্যাবের মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মোট ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। চার্জশিট আমরা খুব শিগগিরই জমা দেব। সেই চার্জশিট তো আজও জমা দেওয়া হলো না।”’ আদালত কেন চুপচাপ আছে, তা জানতে চান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর, বর্বর হতে পারে, তার প্রমাণ এই ত্বকী হত্যা এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম। ১৪৬ বার ত্বকী হত্যার তারিখ ঘুরেছে তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়ার জন্য। তারপরও তা দেওয়া হয়নি।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে ত্বকীকে অপহরণ করা হয়। এর দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় সে বছরের ২৮ মে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাব তদন্তভার নেয়।