তেঁতুলতলা মাঠে চলছে নির্মাণকাজ, শ্রমিকের চেয়ে পুলিশ বেশি
মাঠের মধ্যে যত না শ্রমিক নির্মাণকাজ করছেন, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য মাঠের ভেতর ও বাইরে অবস্থান করছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কলাবাগান এলাকার তেঁতুলতলা মাঠে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
এই মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় এবং নির্মাণকাজের ভিডিও ধারণ করায় গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্নাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়। দুজনকে রাখা হয় কলাবাগান থানায়।
সৈয়দা রত্না উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। গতকাল তাঁদের এই আটক নিয়ে দিনভর ব্যাপক সমালোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাঁদের আটকের খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন। পরে বিক্ষোভের মুখে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজও নাগরিক সমাজের একাধিক কর্মসূচি রয়েছে নগরীতে।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক সীমানা দেয়ালের খুঁটি নির্মাণের কাজ করছেন। কয়েকজন শ্রমিক আবার নির্মাণকাজের জন্য লোহার রড সোজা করার কাজ করছিলেন। এ সময় মাঠের ভেতর ও বাইরে কলাবাগান থানা-পুলিশের তিনটি গাড়ি দেখা গেছে। একটি গাড়ি ছিল মাঠের ভেতরে। অন্য দুটি মাঠের বাইরে, উত্তর ও পশ্চিম পাশে। মাঠের ভেতর ও বাইরে প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য সাতজন।
মাঠের ভেতর থাকা পুলিশ সদস্যরা চেয়ারে বসেছিলেন। কেউ কেউ ব্যস্ত ছিলেন মুঠোফোনে। মাঠের বাইরে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা দুটি গাড়িতে সাত পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ও উপপরিদর্শক পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মাঠের পশ্চিম অংশে (ওয়াসার গভীর নলকূপের পাশে) পুলিশের পোশাক ছাড়া কয়েকজন ব্যক্তিকে বসে কথা বলতে দেখা গেছে। স্থানীয় কয়েকজন শিশু-কিশোর মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে নির্মাণকাজ দেখছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে শ্রমিকেরা কাজে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই সেখানে পুলিশ সদস্যরা পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৯টার পর পুলিশের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায় বলেও জানান ওই বাসিন্দা।
মাঠে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়ে এক পুলিশ সদস্যের (কনস্টেবল) কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পান্থপথের উল্টো দিকের গলির পাশের খোলা জায়গাটিই তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি মাঠটিতে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েকটি শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।