তেঁতুলতলা মাঠে চলছে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি
ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ। ঈদের দিন কাল মঙ্গলবার সকাল আটটায় ওই মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এলাকাবাসীর পক্ষে ওই ঈদের জামাতের আয়োজন করছেন উত্তর ধানমন্ডি মসজিদ কমিটি।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তেঁতুলতলা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের সামনে টাঙানো হয়েছে বড় একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদের জামাত হবে সকাল আটটায়। মাঠে কোনো নির্মাণসামগ্রী নেই। পরিষ্কার করা হয়েছে ময়লা-আবর্জনাও। প্যান্ডেল করার জন্য বাঁশের অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শেষ। এখন শুধু কাপড় টাঙানো বাকি।
মাঠে ঈদের জামাত আয়োজনের কার্যক্রমের তদারক করছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। এর মধ্যে ছিলেন তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ করিমসহ অন্যরা।
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবিতে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছিল। এর মধ্যে গত ২৪ এপ্রিল মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখে। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা মাঠ রক্ষায় আরও সোচ্চার হন। আন্দোলনের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত ২৮ এপ্রিল জানান, তেঁতুলতলা মাঠে আর কোনো নির্মাণকাজ হবে না। জায়গাটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাঠ নিয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সৈয়দা রত্না প্রথম আলোকে বলেন, মাঠকে ঘিরে এলাকাবাসী সবার মধ্যেই আনন্দ হচ্ছে। মাঠের সামনে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এর আগে কখনোই ঈদের শুভেচ্ছা আর ঈদের জামাত নিয়ে মাঠের সামনে ব্যানার টাঙানো হয়নি।
সৈয়দা রত্না আরও বলেন, ‘আমি চাই এ মাঠ যেন খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারি। এ মাঠ হোক স্বতন্ত্র একটি মাঠ। এলাকাবাসী সবাই যেন এই মাঠ ব্যবহার করতে পারে। ভবিষ্যতে কেউ এই মাঠ অধিকার করতে এলে কিংবা বন্ধ করে দিতে এলে সরকারই যেন এটাকে প্রতিহত করে।’ মাঠ রক্ষার আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এলাকার প্রতিটি মানুষ মাঠের পক্ষে। কিন্তু এ রকম একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস সবাই পাননি। তবে আমি নিজে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সবাই সামনে থাকতে না পারলেও অনেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এবারই প্রথম পুরো মাঠে প্যান্ডেল করা হচ্ছে, যা আগে কোনো ঈদের জামাতেই করা হয়নি। মাঠের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকাবাসীর বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম এবং কিশোর-যুবকদের খেলাধুলার কথা চিন্তা করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেই আনন্দ থেকেই ঈদের জামাতের এমন আয়োজন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মাসুদ করিমও আজ দুপুরে মাঠে ঈদের জামাতের প্রস্তুতির নানান বিষয় তদারক করছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন খেলাধুলা থেকে শুরু করে সামাজিক ও ধর্মীয় নানান কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতা ছিল। পুলিশ দাঁড়াতেই দিত না। কিন্তু এবার পুরো মাঠে বড় প্যান্ডেল হচ্ছে। এবারের আমেজটাই ভিন্ন। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এবারের ঈদের জামাত উৎসবমুখর হতে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, মাঠের বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিয়ে মাঠটিকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর জন্য বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হোক। এ অবস্থায় থাকলে ভবিষ্যতে মাঠ নিয়ে আবার জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।