তিতাস ও দক্ষিণ সিটির সাড়া পায়নি সিটিটিসি

ছয়টি তদন্ত সংস্থার মধ্যে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণ
ফাইল ছবি

ঢাকার মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট মামলার তদন্ত করছে। সিটিটিসি বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় একাধিক সরকারি সংস্থার অবহেলার বিষয়টি সামনে আসার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তারা চিঠি পাঠিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চিঠির জবাব না আসায় তদন্ত এগোচ্ছে না।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভিন্ন সংস্থা। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দুটি তদন্তেই উঠে এসেছে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবহেলার কথা।

তা ছাড়া ৬০ বছরের একটি পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দোষারোপ করা হয়েছে ভবনের মালিককে। অন্যদিকে নীতিমালা না মেনে জীর্ণ ভবনটিতে উচ্চ লোডসম্পন্ন চিলার ও কুলার ব্যবহার করায় বেঙ্গল মিটের অবহেলা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

পুলিশের তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং মামলার তদন্ত সংস্থা সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের কমিটি গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

গত ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারের ওই বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন ২৮ জুন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়ির মালিক, শরমা হাউস, বেঙ্গল মিট, গ্র্যান্ড কনফেকশনারি, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকস, তিতাস গ্যাস এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে কারও না কারও অবহেলায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। তদন্তকারী সিটিটিসি তিতাস গ্যাস ও সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়। তবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কোনো চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-০১ মেরীনা নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত সংস্থা থেকে তাঁরা কোনো চিঠি পাননি। তবে ভবন ভেঙে ফেলার বিষয়ে তাঁরা মালিককে চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান। সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গ্যাস লাইনের লিক হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

চিঠির বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহর সঙ্গে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে বেঙ্গল মিটের একটি কক্ষে মিথেন গ্যাস জমা হয়। পরে স্পার্ক হওয়ার পর ‌ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এখানে বিস্ফোরণজাতীয় অগ্নিকাণ্ডের বদলে দুটি ‘ফ্ল্যাশ ওয়েব’ তৈরি হয়। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভবনের নিচতলায় অবস্থানকারীরা মারা যান।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কী করা যায়, এ বিষয়েও কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।