তাঁতীবাজার-শাঁখারী বাজারে এবার জমেনি হালখাতা
পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতা উৎসব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বরাবরই আগ্রহ থাকে। কিন্তু পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে আজ বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখ ও হালখাতা উৎসব উদ্যাপন করা হচ্ছে। শাঁখারী বাজারের দোকানিদেরও আজ হালখাতা উৎসব উদ্যাপন করতে দেখা যায়নি।
তাঁতীবাজার ও শাঁখারী বাজারের দোকানিরা অনেকে আগামীকাল শুক্রবার পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ উদ্যাপন করবেন। নতুন বছর উদ্যাপন উপলক্ষে আজ অনেকেই তাঁদের দোকান পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করছেন। এ ছাড়া কয়েকটি দোকান সাজাতেও দেখা গেছে।
তাঁতীবাজার ও শাঁখারী বাজারের দোকানিদের অধিকাংশ হিন্দুধর্মাবলম্বী। তাঁরা পঞ্জিকা মেনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উদ্যাপন করে থাকেন। তাঁরা বলছেন, সরকারি হিসাবে আজ বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখ হলেও পঞ্জিকার হিসেবে তা আগামীকাল শুক্রবার। যুগ যুগ ধরে তাঁরা পঞ্জিকা মেনেই বৈশাখ উদ্যাপন করছেন। তাই তাঁরা আগামীকাল বৈশাখ ও হালখাতা উৎসব উদ্যাপন করবেন।
পয়লা বৈশাখ ও হালখাতা উৎসব আজকে উদ্যাপন করছে না শাঁখারী বাজারের ধর্মীয় টাইলস ও প্রতিমার দোকান রাতুলস। রাতুলসের মালিক প্রদীপ সুর বাবলা বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে আমরা পঞ্জিকা অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করে আসছি। পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার চৈত্রসংক্রান্তি, আর আগামীকাল শুক্রবার পয়লা বৈশাখ। আমরা সেভাবেই পালন করছি।’
সরকারি ও পঞ্জিকা হিসাবে গত বছর একই দিনে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তাঁতীবাজারের পুষ্প জুয়েলার্সের মালিক শিশির চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘এবার সরকারি ও পঞ্জিকা হিসাবে একদিন আগে-পরে বৈশাখ। যেহেতু পঞ্জিকা অনুযায়ী, আমরা যুগ যুগ ধরে পয়লা বৈশাখ ও হালখাতা উদ্যাপন করছি; এবারও তা–ই করব। আজকে দোকান শেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দোকান সাজানো শেষ করব। আমার মতো তাঁতীবাজারের অধিকাংশ দোকানি আজ রাতের মধ্যে দোকান সাজানো শেষ এবং কাল নতুন বছর ও হালখাতা উৎসব উদ্যাপন করবেন।’
সময়ের পরিবর্তনে বৈশাখ ও হালখাতায় উদ্যাপন এবং আমন্ত্রণের ধরনেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আগে কার্ড ছেপে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখন ফোন করে বা এসএমএসের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আসাদুল ইসলাম জুরাইনের বাসিন্দা। তাঁতীবাজারের এম এম জুয়েলার্সে প্রবেশ করতেই তাঁকে ‘শুভ পয়লা বৈশাখ’ বলে সম্বোধন করলেন দোকানটির কর্ণধার তন্ময় কর্মকার। তারপর পরস্পর কুশল বিনিময় করলেন। যাওয়ার সময় দোকানের পক্ষ থেকে আসাদুলকে বৈশাখের উপহার দেওয়া হয়। মিষ্টি, কাপ, চাবির রিং, জুয়েলারি ব্যাগ, ছোট ডায়েরি ও ছোট ক্যালেন্ডার ছিল উপহারসামগ্রীতে।
আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরখানেক আগে এই দোকান থেকে স্বর্ণালংকার কিনেছিলাম। সেই সম্পর্কের জায়গা থেকে তাঁরা আমাকে বৈশাখের দাওয়াত দিয়েছিলেন।’
তন্ময় কর্মকার বলেন, ‘নিয়মিত ক্রেতা ও ভালো মালামাল কেনে, এমন ক্রেতাদের আমরা বৈশাখে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাঁদের সঙ্গে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় করছি। ক্রেতারা আমাদের কাছে আত্মীয়ের মতো। এই বৈশাখের দিনে আমরা ব্যবসার বাইরে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করি। আর স্বর্ণের ব্যবসা এমন, বিশ্বাস ছাড়া কেউ পণ্য কিনতে চায় না।’
রাজধানীর ইসলামপুরের বাসিন্দা পারুল আক্তার বৈশাখ ও হালখাতার আমন্ত্রণ পেয়েছেন ফোনে। তাঁতীবাজারের আকাশ গোল্ড হাউস অ্যান্ড জুয়েলার্সের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে যখন তিনি আসেন, তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় দোকান কর্তৃপক্ষ। পারুল আক্তার বলেন, ‘এই দোকানে অলংকার বন্ধক রেখেছি। যেহেতু আসবই, তাই বন্ধকির যে মুনাফা হয়েছে, সেটা নিয়ে এসেছি। এখন চলে যাব। যাওয়ার আগে মিষ্টি ও ব্যাগ উপহার হিসেবে দিল।’
আকাশ গোল্ড হাউস অ্যান্ড জুয়েলার্সের মালিক আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘আজকে লেনদেন করতে হবে এমন না। তাঁরা আমার নিয়মিত গ্রাহক; দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। নতুন বছর তাঁদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। বছরের নতুন দিনে পয়লা বৈশাখে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব, সেটাই উদ্দেশ্য।’
দোকানিরা পুরোনো হিসাব চুকিয়ে নতুন হিসাব খোলেন। এ জন্য প্রয়োজন হয় নতুন খাতার। তাঁতীবাজার ও শাঁখারী বাজার ঘুরলে ফুটপাতে নতুন খাতার দোকানের দেখা মেলে। তাঁতীবাজারে নতুন খাতা বিক্রি করছিলেন মো. রমিজ খান। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ থেকে দোকানিরা নতুন খাতা খোলেন। এই সময় এর চাহিদা থাকে। তাই এখানে খাতা বিক্রি করতে এসেছি।