ঢাকায় হঠাৎ যানজট যে কারণে

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তানের সড়কের দৃশ্য
ছবি: হাসান রাজা

হঠাৎ যানজটের তীব্রতা বেড়েছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। গতকাল বুধবারের তীব্র যানজটের পর আজ বৃহস্পতিবারও রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় সকালে বেশ যানজট ছিল। তবে দুপুরের দিকে জট কমে আসে। হঠাৎ কেন যানজট এত বাড়ল, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলল নানান ব্যাখ্যা। জানা গেল, সামনের কয়েক দিন রাজধানীর কিছু এলাকার মূল সড়কে যানজট বাড়তে পারে।

আজ সকাল থেকেই তীব্র যানজট দেখা গেছে রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কগুলোয়। এতে ওই সব সড়কে চলাচলাকারী মানুষকে পোহাতে হয় ভোগান্তি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন জোনের ট্রাফিক বিভাগের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেট্রোরেল প্রকল্পের যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা কিছু জায়গায় দখল হয়ে আছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) একটি প্রকল্পের কাজে ব্যাপক আকারে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পাশাপাশি বর্ষার আগে খোঁড়াখুঁড়ি করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজও চলছে। তা ছাড়া গতকাল ও আজ তুলনামূলক বেশিসংখ্যক গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নেমেছে। মূলত এসব কারণেই এই হঠাৎ যানজট।

ওই তিন কর্মকর্তার ভাষ্য, ঢাকায় যানজটের বড় কারণ হলো, বিভিন্ন এলাকার রাস্তার নির্মাণকৌশল। যেমন মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে চারটি লেন নিচে নামে। পুরোনো রমনা থানার গলির সামনে এসে এটি হয়ে যায় দুই লেন। চারটি লেন যখন দুটি লেনের সঙ্গে মিলে যায়, স্বাভাবিকভাবেই তখন যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া রাজধানীর সোনারগাঁও ক্রসিংয়ের চারটি রাস্তার দুটি কখনোই একসঙ্গে সচল থাকে না। এই রাস্তার নির্মাণটাই এমন যে একটি সময়ে একটিমাত্র রাস্তাতেই গাড়ি চলাচল করতে পারে। ১২ মিনিট পরপর একেকটি রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময় অনেক গাড়ি জড়ো হয়ে যানজট তৈরি হয়। রিকশার আধিক্যও যানজটের অন্যতম কারণ।

প্রতি সপ্তাহের সোম ও বুধবার ট্রাফিক পুলিশকে বেশ চাপে থাকতে হয় বলে জানান এই কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার বন্ধ থাকার পর বুধবার নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিপণিবিতান খোলে। ফলে অনেক মানুষ ও গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। এটি যানজটের অন্যতম কারণ। বৃহস্পতিবারে পুরান ঢাকার দিকে চাপ থাকে। এর কারণ পরের দিন (শুক্রবার) ছুটির দিন হওয়ায় অনেক মানুষ ও গাড়ি একসঙ্গে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে যায়।

গতকাল ও আজ হঠাৎ যানজট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর শাহবাগ জোন ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. নূর নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল আর আজ হঠাৎ অনেক বেশিসংখ্যক গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। এটি যানজট তৈরির অন্যতম কারণ। এর বাইরে অনেক জায়গায় মেট্রোরেলের কাজ চলছে, তা ছাড়া বর্ষার আগে খোঁড়াখুঁড়ি করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজও চলছে। ফলে কোথাও কোথাও রাস্তা সরু হয়ে পড়েছে। শাহবাগ জোনে মূল সমস্যা হলো, এখানে পুরোদমে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। ফলে চার লেনের রাস্তা কোথাও কোথাও দুই লাইন হয়ে পড়েছে।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তানের সড়কের দৃশ্য
ছবি: হাসান রাজা

রমনা জোন ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় যানজটের বড় কারণ হলো বিভিন্ন এলাকার রাস্তার নির্মাণকৌশল। গতকাল ও আজ যানজট হওয়ার কারণ, বিটিসিএলের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। গত বছরের মার্চে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এটি পুরো এক বছর পিছিয়ে গেছে। তারা সাধারণত ধীরে ধীরে কাজ করে। কিন্তু এখন তাদের একসঙ্গে অনেক কাজ করতে হচ্ছে। একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো গর্ত করতে বাধ্য হয়েছে তারা। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে পড়েছে।

রেফাতুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের এখন একদম শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। এই কাজের যন্ত্রপাতিগুলো রাখার জন্য রাস্তার জায়গা দখল করতে হয়। বাংলামোটর থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল বা শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলোয় এ চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন আবার সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত বাঁ লেনে ওয়াসার কাজ হবে। ফলে সামনে প্রায় এক মাস এ রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে, যানজট আরও বাড়তে পারে।

রাস্তায় অত্যধিক রিকশা যানজটের অন্যতম কারণ। রাস্তা বা ফুটপাতে অবৈধ দখলের কারণেও কোথাও কোথাও যানজট হয়। তা ছাড়া আজ পুরানা পল্টনে বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করার জন্য জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। ফলে রাস্তায় কিছুটা যানজট হয়েছে।