ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আবার বেড়েছে। পুলিশের তৎপরতার মধ্যেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেশ কিছু অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এ কথা জানিয়েছে। ডিবি জানিয়েছে, ঢাকায় প্রতি মাসে ১৫-২০টি খুন হয়।
সম্প্রতি কদমতলী ও মুগদায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে এমন দুটি খুনের ঘটনায় পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। মুগদার মান্ডায় হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা কিশোর। ‘সালাম’ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়ায় এবং হাসান নামের একজন খুন হয়। সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। তাদের ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার কিশোরদের সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মান্ডায় হাসান (১৭) খুন হয়। মান্ডায় কিশোর গ্যাংটির নাম ব্যান্ডেজ। মুগদার একটি ছাপাখানার কর্মী হাসানও ব্যান্ডেজ দলের সদস্য ছিল। ওই দলেরই সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হাসানকে বাসা থেকে স্থানীয় কয়েকজন কিশোর মান্ডায় লেটকা ফকিরের গলিতে ডেকে নিয়ে যায়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাসানকে এলোপাতাড়ি ছুরি মারে সঙ্গীরা। এতে হাসানের পেটে ও গলায় গুরুতর জখম হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, রাজধানীজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা আবার বেড়েছে। করোনাকালে যদিও তাদের খুব একটা দেখা যায়নি, সম্প্রতি আবার তাদের নানা রকম বিরোধে জড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত এই কিশোরেরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান।
আইনের সংস্পর্শে আসা কিশোরদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের কথা শোনা যায়। পুলিশের কাছে কী তথ্য আছে? জবাবে মাহবুব আলম বলেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যায় উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলের নাম এসেছে, আরও অনেক ঘটনাতেই উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোরদের সম্পৃক্ততা থাকার পরও পুলিশ কেন নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোরদের দায়ী করছে? এমন প্রশ্নে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তাঁদের কাছে থাকা অপরাধের খতিয়ানের ভিত্তিতে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোরেরা কি শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত বা তারা কি কাজ পাচ্ছে না? এমন প্রশ্নে ডিবি বলেছে, এসব বিষয় তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।
কদমতলীতে খুনের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির ওয়ারী বিভাগ। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে কদমতলী এলাকার পূর্ব জুরাইন কলেজ রোডের নবারুণ গলির মাথায় খুন হন জাকির হোসেন (৫২)। কদমতলী থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাতজন হলেন মো. শুক্কুর, মো. নুরুল ইসলাম, মো. রতন ওরফে সোলাইমান ওরফে রেম্বো, মো. শফিকুর রহমান ওরফে দিপু, ফাহিম হাসান ওরফে লাদেন, মো. তরিকুল ইসলাম ও মো. মাসুদ পারভেজ।
ডিবি জানায়, একদল দুর্বৃত্ত মো. জাকির হোসেনকে ছুরি দিয়ে বুকে ও পেটে নৃশংসভাবে আঘাত করে এবং পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তাঁর সঙ্গে থাকা মো. মজিবর রহমান ওরফে মোহনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা জাকির হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কদমতলী থানায় মামলা হয়েছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য। ঘটনার দিন এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাকির ও মজিবরের ওপর হামলা চালায় তারা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।