অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের প্রশ্ন
ঢাকা কলেজের হোস্টেলে মেধাবীরাই থাকত, সেখানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা থাকে
‘ঢাকার বাইরে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররাই ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকত। সেসব ঘরে এখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা থাকে চিন্তা করলে গা হিম হয়ে আসে।’
নিজের ফেসবুক পোস্টে আজ সোমবার আক্ষেপ করে কথাগুলো লেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির খ্যাতনামা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি ১৯৬০–এর দশকে এ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই স্মৃতি তুলে ধরেন এই পোস্টে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এ পোস্ট।
গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। রাতের এ ঘটনার জের গড়ায় পরদিন মঙ্গলবার পর্যন্ত। দিনভর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাঁর স্মৃতির এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে কেন যেন মন টানছিল আমার ছাত্রজীবনের অনেক সুখস্মৃতি জড়িত ঢাকা কলেজের নর্থ হোস্টেল একবার ঘুরে আসব। কলেজে পড়ার দুই বছর ১৯৬৩-৬৫ সনে হোস্টেলের যে ঘরটিতে একটানা থেকেছিলাম, দোতলার সেই ২১৬ নম্বর ঘরটিতে এখন কারা থাকে, কীভাবে থাকে, জানতে ইচ্ছা হচ্ছিল। ভেবেছিলাম তাদের সঙ্গে বসে একটু স্মৃতিচারণা করে আসব। কিন্তু তা বোধহয় আর হলো না।’
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংস ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘সংবাদমাধ্যমগুলোয় কয়েক দিন ধরে ঢাকা কলেজের ছাত্র আর নিউমার্কেটের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ নিয়ে শিরোনাম হচ্ছে। একজন নিরীহ পথচারী কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ছবি দিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন বেরিয়েছে। জীবজগতের মধ্যে মানুষই যে সবচেয়ে নৃশংস হতে পারে, এই জানা কথাটা নিজের চেনাজানা পারিবেশের মধ্যে নতুন করে ঘটতে দেখলে মনে ধাক্কা লাগে। বিশেষ করে, যখন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য এ ধরনের ঘটনার সংবাদ নতুন কিছু নয়, এত দিনে গা সওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। এই সেদিনও তো বুয়েটের ছাত্র আবরারকে ছাত্রাবাসের ভেতরেই দলীয় ছাত্র সংঘটনের কর্মীরা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যে ছাত্রসমাজকে দিয়ে আমরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির স্বপ্ন দেখছি, তাদের মধ্যে কী ধরনের দানবদের আমরা লালন পালন করছি।’
নিজের থাকা হোস্টেলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পোস্টে। তিনি লেখেন, ‘আর একবার হোঁচট খেলাম যখন দেখলাম যে সংবাদে অভিযুক্ত ছাত্রদের নর্থ হোস্টেলের আবাসস্থল হিসেবে যে দুটি রুমের নাম এসেছে তার একটি ২১৮। হোস্টেলের ইস্ট উইং-এ আমার তখনকার ঘরের এক ঘর বাদ দিয়ে এ ঘরটি। আমার সময়ে এ ঘরে যে ছাত্ররা থাকত তারা আমার এক কালের খুব কাছের মানুষ; সবাই পরবর্তী জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন—একজন বুয়েটে শিক্ষকতা শেষে অবসরে গেছেন, আরেকজন বুয়েট থেকে পাস করার পর একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে সর্বোচ্চ পদে থেকে অবসর নিয়েছেন, আরেকজন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষকতা করে সেখানেই বসবাস করছেন। হোস্টেলের সব ঘরের বাসিন্দাদের সম্বন্ধেই এরকমটি বলা চলে। কারণ, ঢাকার বাহির থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররাই ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকত। সেসব ঘরে এখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারা থাকে চিন্তা করলে গা হিম হয়ে আসে।’