টিসিবির কার্ড পেতে অবস্থান কর্মসূচি
শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে লুবনাকে নিয়ে তিন সদস্যের সংসার ফিরোজা বেগমের (৭০)। সংসার চলে এই মেয়ের হাত মেশিনে জামাকাপড় সেলাই থেকে আসা আয় দিয়েই। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস এখন পরিবারটির। কম দামে পণ্য কিনতে কয়েক দিন টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ফিরোজা। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে ভিড়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি করে পেরে ওঠেননি তিনি। তাই ঝক্কিঝামেলা এড়িয়ে সাশ্রয়ী দামে পণ্য পেতে চান তিনি। এ জন্য অন্যদের সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে পূর্ব জুরাইন এলাকায় টিসিবির পণ্য পেতে কার্ডের দাবিতে প্রায় শ খানেক নারী স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। স্থানীয় কয়েকজনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি ডাকা হয়।
এ সময় ফিরোজা প্রথম আলোকে বলেন, বাবাহারা দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি খুব কষ্টে চলছেন। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কি করার শক্তি তাঁর নেই। এ জন্য ফ্যামিলি কার্ডের দাবিতে তিনি রাস্তায় নেমেছেন।
ঢাকা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা বাদে দেশব্যাপী এক কোটি নিম্নআয়ের পরিবারকে গত রোববার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি পণ্য দিচ্ছে সরকার। এ জন্য সুবিধাভোগী পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিটি পরিবার ১১০ টাকা দামে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দামে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দামে ২ কেজি মসুর ডাল ও ৫০ টাকা দামে ২ কেজি ছোলা পাবে।
রাজধানী ঢাকায় এই কার্ড চালুর দাবিতে আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর পূর্ব জুরাইন এলাকায় শ খানেক নারী স্থানীয় কাউন্সিলর মীর হোসেনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের হাতে ফ্যামিলি কার্ডের দাবিতে এক ঘণ্টা অবস্থান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।
এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে কার্ড দিচ্ছে। কিন্তু ঢাকা ও বরিশালে দিচ্ছে না। গ্রামে টিকতে না পেরে মানুষ ঢাকায় আসছে। ঢাকায় দরিদ্রের সংখ্যা আরও বেশি। ঢাকায় কার্ড দেওয়া হবে না, এটা হতে পারে না। কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি টিসিবির ট্রাকের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, মানুষ টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে চায়। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে ভিক্ষুকের মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এভাবে চলতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হতো না। মধ্যবিত্ত অনেকে টিসিবির লাইনে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে, মনে হয় তাঁরা ভিক্ষা করতে গেছেন।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে দেড় লাখ মানুষ বসবাস করে উল্লেখ করে মিজানুর আরও বলেন, এঁদের মধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে আছে ৯০ হাজারের মতো। তিনি এই এলাকায় টিসিবির পর্যাপ্ত ট্রাক দেওয়া, এসব ট্রাক কোথায় থাকবে, তা আগে জানানোর দাবি জানান।
এদিকে কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি শুরুর ২০ মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন কাউন্সিলর মীর হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকার ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটিতে কোনো কার্ডের সিস্টেম রাখেনি। টিসিবির মালামাল গাড়ি দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মাঝেমধ্যে ফোন করে গাড়ি কোথায় রাখবে। তখন একেক দিন একেক এলাকার কথা বলে দিই।’
ফ্যামিলি কার্ডের এই দাবির সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি একমত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর মীর হোসেন বলেন, তিনি সব সময় জনগণের পাশে ছিলেন। সরকার থেকে যা পেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করবেন।